স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়
শরীর সুস্থ রাখার খাবার তালিকা
আপনি পুষ্টিকর খাবার দিয়ে আপনার দৈনিক খাদ্য তালিকা তৈরি করতে পারেন এবং সে অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করে শরীর সুস্থ রাখতে পারেন। শরীর সুস্থ রাখার খাবারের একটি নমুনা তালিকা নিচে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়াও সবুজ শাকসবজি ও ফল হিসেবে যেকোনো ধরনের সবজি ও ফল খেতে পারেন। পালং শাক, বাঁধাকপি, ফুলকপি, আপেল, কলা, আঙ্গুর, কমলা ইত্যাদি। বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজি খাওয়া উচিত।
● শস্য: চাল, গম, ওটস ইত্যাদি।
● দুগ্ধজাত পণ্য: দুধ, দই, পনির, ঘি ইত্যাদি।
● মাছ ও মাংস: গরু ছাগলের মাংস,বিভিন্ন মাছ, চিংড়ি, মুরগি ইত্যাদি।
● বাদাম ও বীজ: বাদাম, আখরোট, তিল ইত্যাদি।
● ডাল: মসুর ডাল, মুগ ডাল ইত্যাদি।
মধু
দিন শুরু করুন এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে মধু মিশিয়ে। এই পানীয় আপনার পেটকে ঠিক রাখবে। পেট ফোলা, গ্যাস, অম্বলের মতো সমস্যা কমবে। আর মধুতে থাকা পুষ্টি উপাদান আপনার শরীরকে আরও শক্তিশালী করবে।
বাদাম
সকালে এক মুঠো বাদাম খেলে শরীর ভালো থাকে। বাদাম খেলে পেট ঠিক থাকে এবং খাবার ভালো হজম হয়। এছাড়াও, বাদাম আমাদের মস্তিষ্ককেও ভালো রাখে, স্মৃতিশক্তি বাড়ায় ফলে আমরা আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারে। কিশমিশ, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তা বাদাম সকালে উঠে খেতে পারেন। কিন্তু অনেক বেশি খেলে হবে না। বেশি খেলে পেট ফুলে উঠতে পারে আর ওজনও বাড়তে পারে। খালি পেটে ভিজিয়ে রাখা বাদাম খেলে শরীর ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন ই, প্রোটিন, ফাইবার ও ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো অসংখ্য পুষ্টি উপাদান পায় ।
বীজ
স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বিভিন্ন ধরনের বীজ খাওয়া যেতে পারে। ওজন বাড়াতে খাবারে মিশিয়ে খাওয়া যায় মিষ্টি কুমড়ার বীজ, সূর্যমূখীর বীজ, তিসির বীজ, চিয়া সিড ও তিলের বীজ।
খেজুর
খেজুরে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম আছে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। আয়রন আর ফলিক অ্যাসিড আছে, ফাইবার আছে, যা রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। মোটকথা খেজুরের পুষ্টিগুণ অসাধারণ।
তিল
তিলে 'সিস্যামোলিন্স' এবং 'সেসামিন' নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে। এই দুটি উপাদান অক্সিডেটিভ স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তিলের মধ্যে যেহেতু ক্যালশিয়ামের পরিমাণ বেশি, তাই এ খাবার হাড়ের জন্যও ভালো। তাই শরীর ভালো রাখতে নিয়মিত তিল খেতে পারেন।
ইসবগুলের ভুষি
ইসবগুলের ভুসি খাবার হজমের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর ফলে আমরা যে খাবার খাই তার সহজে হজম হয়ে যায় এবং আমাদের পরিপাকতন্ত্র ভালো থাকে এবং খাবার চাহিদা বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন ২ চামচ ইসবগুল ২৫০ মিলিলিটার পানিতে মিশিয়ে খেলে ইসবগুল পাকস্থলী পরিষ্কার করে।
গ্রিন টি
স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে শরীরের ওজন যেমন অতিরিক্ত বৃদ্ধি হতে দেওয়া যাবে না। তেমন শরীরের ওজন অতিরিক্ত কমে গেলে চলবে না। তাই ওজন কম থাকলে বেশি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার খেতে হবে। যেমন- বিভিন্ন ধরনের বাদাম, কিসমিস, ছোলা ইত্যাদি।
আর ওজন বেশি হয়ে গেলে বিভিন্ন ব্যায়ামের মাধ্যমে এবং ডায়েটের মাধ্যমে ওজন কমানোর চেষ্টা করতে হবে প্রয়োজনে গ্রিন টি খেতে হবে।
শরীর ভালো রাখার উপায়
স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরী। নানাবিধ পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি কিছু হারবাল প্রোডাক্টস খেতে পারেন। হারবাল প্রোডাক্ট আপনার দেহে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে আরো বেশি সহায়তা করবে।
আমাদের শরীর ভালো থাকলেই আমরা সুখী থাকতে পারি। তাই সুস্থ থাকার জন্য আমাদের সঠিক খাবার খওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং পর্যাপ্ত ঘুমানো উচিত।
স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়
১. নিয়ম করে পরিমিত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন, খুব বেশি বা খুব কম খাবেন না। শাক-সবজি, ফল, আঁশযুক্ত খাবার খাবার তালিকায় যুক্ত করুন। ভাজাপোড়া, মাখন, ঘি ইত্যাদি চর্বিজাতীয় খাবার কম খান। বার্গার, পিজ্জা, নুডলস ইত্যাদি ফাস্টফুড স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
২.আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় কিছু খাবার রয়েছে যা খুবই সুস্বাদু হলেও অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এই ধরনের খাবারের মধ্যে রয়েছে লাল মাংস, মিষ্টি, ঘি এবং ডালডা। তাই এগুলো বেশি পরিমাণে খাবেন না।
৩.একবারে অনেক খাওয়ার চেয়ে দিনে কয়েকবার অল্প অল্প করে খাওয়া ভালো। এতে শরীর সব সময় পুষ্টি পায় এবং হজমেও সমস্যা হয় না।
৪.কোমল পানীয়, আইসক্রিম, ক্যান্ডি, কুকিজ ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে। অতিরিক্ত চিনি ওজন বাড়ায়, দাঁত ক্ষয় করে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এগুলো খাবার তালিকা থেকে বাদ দিন।
৫.অতিমাত্রায় চা ও কফি পান করার অভ্যাস পরিত্যাগ করুন। তার পরিবর্তে টাটকা ফলের রস খান।
স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। কারণ আপনার শরীর যদি ভালো না থাকে তাহলে কোন কিছুতেই আপনি ভালো থাকতে পারবেন না। তাই সবার আগে চাই সুস্থ শরীর।
ঘুমের গুরুত্ব
ঘুম শরীরের জন্য খাবারের মতোই জরুরি। ঘুমের সময় শরীর নিজেকে মেরামত করে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীর ক্লান্ত থাকে, মন খারাপ হয় এবং বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ে। প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে চেষ্টা করুন। দিনে ঘুমানোর অভ্যাস ত্যাগ করে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যান। আর ঘুমাতে যাওয়ার আগে আরামদায়ক কাপড় পরুন।
স্বাস্থ্য রক্ষায় পর্যাপ্ত পানি পানির ভূমিকা
আমাদের শরীরের প্রায় ৬০% পানি দিয়ে গঠিত। শরীরের কোষগুলো সঠিকভাবে কাজ করার জন্য পানির প্রয়োজন। পানি খাবার হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। একজন স্বাস্থ্যবান ব্যক্তির জন্য দৈনিক ১০-১২ গ্লাস পানি পান করা উচিত। তবে ব্যায়াম, আবহাওয়া, স্বাস্থ্যের অবস্থা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে পানির প্রয়োজনীয়তা পরিবর্তিত হতে পারে।
শারীরিক ব্যায়াম
হাঁটা, দৌড়ানো, যোগাসন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করা যেতে পারে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট এবং সপ্তাহে কমপক্ষে ৫ দিন ব্যায়াম করা উচিত। শুরুতে হালকা ব্যায়াম করে ধীরে ধীরে তীব্রতা বাড়ানো উচিত।
আপনার শরীরের প্রকৃতি অনুযায়ী ব্যয়াম করুন। যাদের মেদ বা ভুড়ি জমেছে তারা নিয়মিত ও সঠিক ব্যায়াম করতে পারেন।
পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস
ড. মেগান রসি নামে একজন বিজ্ঞানী বলেছেন, শুধু অনেক করে ফল ও সবজি খেলেই হবে না, আমাদেরকে নানা রকমের ফল ও সবজি খেতে হবে। যদি আমরা সপ্তাহে ৩০ রকমের ফল ও সবজি খেতে পারি, তাহলে আমাদের শরীর অনেক ভালো থাকবে।
কারণ, বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজিতে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ থাকে। এই পুষ্টিগুণ গুলো আমাদের শরীরকে শক্তি দেয় এবং আমাদেরকে রোগ থেকে বাঁচায়। সুতরাং, আমাদেরকে শুধু ফল ও সবজি খাওয়ার পরিমাণের দিকে নজর না দিয়ে, এর বিভিন্নতার দিকেও নজর দিতে হবে।
উদাহরণ: মনে করুন, আপনি প্রতিদিন কেবল আপেলই খাচ্ছেন। এতে আপনি অনেক আপেল খেলেও আপনার শরীর সব পুষ্টি পাবে না। কারণ, আপেলে অনেক ধরনের পুষ্টি থাকলেও সব ধরনের পুষ্টি থাকে না। তাই আপনাকে আপেলের সাথে আরও অনেক ধরনের ফল ও সবজি খেতে হবে।
উপসংহার
সুস্থ থাকা মানে শুধু রোগমুক্ত থাকা নয়, বরং শারীরিক ও মানসিকভাবে সক্রিয় ও সতেজ থাকা। এই আর্টিকেলে আমরা স্বাস্থ্য ভালো রাখার বিভিন্ন উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি। সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ কমানো এবং সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলা – এগুলো সুস্থ জীবনের মূল চাবিকাঠি। আজ থেকেই এই অভ্যাসগুলো গড়ে তুলুন এবং সুস্থ থাকুন।
Please comment according to Blogger Mamun website policy. Every comment is reviewed.
comment url