গ্রাফিক্স ডিজাইন কি - গ্রাফিক্স ডিজাইন কত প্রকার
বর্তমান যুগ ডিজিটাল মার্কেটিং এর যুগ। এই যুগে গ্রাফিক্স ডিজাইন ছাড়া পুরো মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টটিই অচল বলা চলে। কারণও আপনার চোখের সামনেই বিদ্যমান। বর্তমানে একটি কোম্পানির মার্কেটিং করার জন্য যা যা দরকার যেমন ব্যানার, লোগো, পোস্টার, বিলবোর্ড, সোশ্যাল মিডিয়া কভার ফটো, টেলিভিশন কমার্শিয়াল ইত্যাদি যার সবকিছুই গ্রাফিক্স ডিজাইনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। যার কারণে গ্রাফিক্স ডিজাইনের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলছে। গ্রাফিক্স ডিজাইনের এত জনপ্রিয়তার কারণে বর্তমান সময়ে আমাদের মাঝে অনেকেই গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই সিদ্ধান্তটি অবশ্যই তার জীবনের সফলতা বয়ে আনবে, যদি সে লেগে থাকে।
গ্রাফিক্স ডিজাইন কি
গ্রাফিক্স ডিজাইনের কথা শুনলেই আমরা বেশিরভাগ মানুষ যা কল্পনা করি তা হলো- কার্ড ডিজাইন, ইন্টারফেস ডিজাইন, লোগো ডিজাইন, ফ্লাইয়ার ডিজাইন ইত্যাদি। আসলে বাস্তবের গ্রাফিক্স ডিজাইনের অর্থ অনেক ব্যাপক। গ্রাফিক্স ডিজাইনের এই ব্যাপারটিকে কয়েকটি বাক্যের মাঝে সংজ্ঞায়িত করা বেশ কঠিন। তারপরেও গ্রাফিক্স ডিজাইন কি? এই প্রশ্নের উত্তরে গ্রাফিক্স ডিজাইনকে সহজভাবে সংজ্ঞায়িত করলে, বিষয়টি হবে এরকম যে - গ্রাফিক্স ডিজাইন হল কোন একটা কনসেপ্ট বা ধারণাকে, বিভিন্ন ছবি, ডিজাইন, শিল্প আর সৃজনশীলতার মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা।
আরো পড়ুনঃ দিনে ৫০০ টাকা ইনকাম করার সেরা apps 2024
অর্থাৎ গ্রাফিক্স ডিজাইন হল একটি মননশীল প্রক্রিয়া যে প্রক্রিয়ায় একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার বিভিন্ন ভিজুয়াল এলিমেন্টস ব্যবহার করে তার চিন্তা ও মননশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। যার কারণে গ্রাফিক্স ডিজাইনকে "আর্ট অফ কমিউনিকেশন" বলা হয়। গ্রাফিক্স ডিজাইন বর্তমানে মার্কেটিং সেক্টর বাদেও বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরে গুলোতেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যাইহোক, আশা করি আপনারা গ্রাফিক্স ডিজাইন কি তা বুঝতে পেরেছেন। এখন চলুন আমরা গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কে আরও বিভিন্ন তথ্য জেনে নেই।
গ্রাফিক্স ডিজাইন কত প্রকার
গ্রাফিক্স ডিজাইন একটি বৈচিত্র্যময় এবং ক্রিয়েটিভ ক্ষেত্র যেখানে গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা তাদের আইডিয়া গুলোকে বিভিন্ন ভিজ্যুয়াল মাধ্যমগুলি ব্যবহার করে বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। গ্রাফিক্স ডিজাইন একটি অনেক বড় ক্ষেত্র। যার অনেক শাখা প্রশাখা রয়েছে। তবে গ্রাফিক্স ডিজাইন সাধারণত দুই প্রকার।
- প্রিন্ট মিডিয়াঃ কোন কিছু ডিজাইন করে যদি সেগুলো প্রিন্ট করা হয় তাহলে এটিকে প্রিন্ট মিডিয়া বলা হয়। যেমনঃ ব্যানার, বিজনেস কার্ড, বুক কভার ডিজাইন, টি শার্ট ডিজাইন, ম্যাগাজিন ডিজাইন, পোস্টার কার্ড, ফুড মেনু ডিজাইন ইত্যাদি।
- ওয়েব মিডিয়াঃ কোন কিছু ডিজাইন করে যদি সেগুলো প্রিন্ট করার দরকার না হয় তবে সেটিকে ওয়েব মিডিয়া বলা হয়। ওয়েব মিডিয়ার অন্তর্ভুক্ত ডিজাইনগুলো সাধারণত ওয়েবসাইটের কাজে ব্যবহার করা হয়। যেমনঃ ওয়েব টেমপ্লেট ডিজাইন, ফেসবুক কভার ফটো, প্রোফাইল ফটো, ওয়েব কভার ফটো ডিজাইন ইত্যাদি।
সাধারণত গ্রাফিক্স ডিজাইন এই দুই প্রকারের হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে গ্রাফিক্স ডিজাইনের ধরন এবং ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে গ্রাফিক্স ডিজাইনকে আরো কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়। যা নিম্নে তুলে ধরা হলো।
- লোগো ডিজাইনঃ গ্রাফিক্স ডিজাইন এর বিভিন্ন টুলস এর সাহায্যে কোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের প্রতীক তৈরি করাকেই সাধারণত লোগো ডিজাইন বলা হয়। গ্রাফিক্স ডিজাইনের মধ্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল এই লোগো ডিজাইন। একটি লোগো কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পরিচয় বহন করতে সক্ষম। একটি লোগো একটি প্রতিষ্ঠানকে আকর্ষণীয় করে তুলতে এবং জনগনের কাছে ঐ প্রতিষ্ঠানের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
- প্যাকেজ ডিজাইনঃ গ্রাফিক্স ডিজাইনের মাধ্যমে একটি পণ্য প্যাকেজিং, ক্যার্টন, বোতল, বক্স ইত্যাদি ম্যাপ প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়াল এর ডিজাইন করাকেই সাধারণত প্যাকেজ ডিজাইন বলা হয়। এটি গ্রাফিক্স ডিজাইনের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্ট।
- কার্টুন ডিজাইনঃ স্কেচ থেকে অ্যানিমেশন তৈরি করার প্রক্রিয়াকেই সাধারণত কার্টুন ডিজাইন বলা হয়। এই প্রক্রিয়ায় কোন স্কেচ বা স্থির চিত্রকে চলমান চিত্রে রূপান্তর করা হয়। বর্তমানে কার্টুন ডিজাইনের সাহায্যে বানানো ভিডিওগুলো বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম এবং ইউটিউবে খুবই জনপ্রিয়।
- মোশন গ্রাফিক্সঃ মোশন গ্রাফিক্স হলো এমন একটি ডিজাইন যা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হতে থাকে। মোশন গ্রাফিক্সের মধ্যে সাধারণত ভিডিও অথবা অ্যানিমেশন তৈরীর মত কাজগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে। মোশন গ্রাফিক্স প্রধানত কাহিনী বা তথ্য নির্ভর হয়। এটি প্রায়ই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি, টেলিভিশন, অনলাইন সামগ্রী এবং অন্যান্য মিডিয়া ফরমেটে ব্যবহার করা হয়, বিশেষ করে এটি বিজ্ঞাপন এবং প্রচারে বেশি ব্যবহৃত হয়।
- টাইপোগ্রাফি ডিজাইনঃ টাইপোগ্রাফি গ্রাফিক্স ডিজাইনের অন্যতম একটি গৌরবময় অংশ। এটি সাধারণত গ্রাফিক্স ডিজাইন এর শব্দের প্রকৃতি, আকার এবং লেখার স্টাইল নির্ধারণ করে। কোন একটি টেক্সটের রং, কালার, স্টাইল, স্থানসহ আরো অনেক কিছুই এই টাইপোগ্রাফি ডিজাইনের উপর নির্ভর করে।
- UI/UX ডিজাইনঃ বর্তমান মার্কেটে গ্রাফিক্স ডিজাইনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি পার্ট হল UI/UX ডিজাইন। যার অর্থ হল ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইন। সহজ ভাষায় বললে- কোন সফটওয়্যার, ওয়েবসাইট, এপ্লিকেশন বা গেমস ইউজারদের জন্য ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে যে ডিজাইন করা হয় তাকেই সাধারণত UI/UX ডিজাইন বলে ইত্যাদি।
বিঃদ্রঃ গ্রাফিক্স ডিজাইন যেহেতু একটি বিশাল ব্যাপার সেহেতু এই সেক্টরের আরো অনেক প্রকারভেদ থাকতে পারে। তবে উপরে উল্লেখিত প্রকারভেদ গুলোই বর্তমানে বেশি প্রচলিত।
গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার ওয়েবসাইট নাম
বর্তমান সময়ে গ্রাফিক্স ডিজাইন অন্যতম একটি চাহিদা সম্পন্ন পেশা। যার চাহিদা দিন যত যাচ্ছে ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা ঘরে বসে যেমন আয় করতে পারেন তেমনি দেশ-বিদেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে রয়েছে তাদের চাকরির সুযোগ। এই সেক্টরে একজন ব্যক্তি তার নিত্য নতুন সৃজনশীলতা বিভিন্ন উপায়ের মাধ্যমে উদ্ভাবন করতে পারেন। তবে হ্যাঁ এর জন্য আপনাকে অবশ্যই অনেক চর্চা, সাধনা ও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। যাইহোক, বর্তমানে গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখানোর জন্য বাংলাদেশে বহু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যারা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি এর বিনিময়ে হাতে কলমে গ্রাফিক্স ডিজাইন শিক্ষা দেয়।
আরো পড়ুনঃ বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজের চাহিদা বেশি
তবে হ্যাঁ এই প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও বাংলাদেশ সহ পুরো বিশ্বে বেশ কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলোর সাহায্যে গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখা সম্ভব। আর আজকের এই পোস্টটির এই অংশটিতে আমরা আপনাদের জন্য দুর্দান্ত কিছু ওয়েবসাইটের লিস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি, যেখান থেকে আপনারা খুব সহজেই গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে পারবেন এবং পেশা হিসেবে এটিকে গ্রহণ করে প্রচুর অর্থ ইনকাম করতে পারবেন। চলুন তাহলে গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার ওয়েবসাইটের নামগুলো জেনে নেই।
- Coursera.com
- Creativelive.com
- Canva.Com
- এডোবি ডট কম
- Kadenze dot com
- SKillshare dot com
- Abduzeedo.com
- LinkedIn Learning
- Tutsplus.com
- Adobe Tutorials
- Loondesign.com
- Graphicdesignertips.com
- Smashingmagazine.com
- Udemy .com Logo Design Fundamental
গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার সেরা কিছু সফটওয়্যার
যদি এখন আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে চান তাহলে আপনার প্রথমেই যে জিনিসটি প্রয়োজন হবে তা হলো একটি ভালো মানের কম্পিউটার অথবা গ্রাফিক্স ট্যাবলেট অথবা একটি ভালো মানের ল্যাপটপ। ধরুন আপনার কাছে একটি ভালো মানের কম্পিউটার, ল্যাপটপ, গ্রাফিক্স ট্যাবলেট রয়েছে, তারপরেও কিন্তু আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে পারবেন না। যদি না আপনি আপনার ডিভাইস গুলোতে গ্রাফিক্স ডিজাইনের বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার না করেন।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশে কোন গেম খেলে টাকা আয় করা যায় বিকাশে পেমেন্ট
এছাড়াও আপনি যদি একটি ভালো, উচ্চমানের ছবি এবং ডিজাইন তৈরি করতে চান তাহলে একটি সঠিক গ্রাফিক্স ডিজাইন সফটওয়্যার নির্বাচন করাও আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই বর্তমানে গ্রাফিক্স ডিজাইন শিল্পকে এগিয়ে নিতে বিশ্বব্যাপী টেক জায়ান্ট গুলো অনেক ধরনের সফটওয়্যার প্রকাশ করেছে। যার মধ্যে গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার সেরা কিছু সফটওয়্যার এর নাম নিম্নে তালিকা কারে তুলে ধরা হলো।
- Adobe Photoshop
- Adobe Illustrator
- Adobe In Design
- Canva
- CorelDraw
- Vectr
- Gimp
- Blender
- Inkscape
- Gravit Designer
- SketchUp
- Pixlr
- GIMP
- Piktochart
- Stencil
- Easelly
- BeFunky
- Krita
- Design Wizard ইত্যাদি
গ্রাফিক্স ডিজাইনে কি কি শিখতে হয়
আপনি যদি গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে চান তাহলে আপনার যে সকল বিষয়গুলো শিখতে হবে তার একটি তালিকা নিম্নে উপস্থাপন করা হলো।
১। গ্রাফিক্স ডিজাইন করার জন্য যে সকল সফটওয়্যার রয়েছে যেমন Adobe Illustrator, Adobe Photoshop, Adobe InDesign ইত্যাদি, এই সকল সফটওয়্যার গুলো সম্পর্কে জানতে হবে এবং কিভাবে এই সফটওয়্যার গুলো প্রয়োগ করতে হয় তা শিখতে হবে।
আরো পড়ুনঃ ডেইলি 500 টাকা ইনকাম apps 2024
৭। নিজের একটি পোর্টফোলিও তৈরি করা, নেটওয়ার্কিং তৈরি করা, পেশাদার ব্যক্তিদের সাথে তাল মিলিয়ে চলা ইত্যাদি কাজগুলো আপনাকে দক্ষতার সাথে শিখতে হবে ইত্যাদি।
গ্রাফিক্স ডিজাইন কেন শিখবো
গ্রাফিক্স ডিজাইন কি, গ্রাফিক্স ডিজাইন কত প্রকার তা ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি। বর্তমান সময়ে গ্রাফিক্স ডিজাইন একটি আকর্ষণীয় পেশা যাকে আর্ট অফ কমিউনিকেশন বলা হয়। বাংলাদেশের মতো একটি দেশ যেখানে চাকরির বাজারের নাজেহাল অবস্থা, যেখানে অর্ধেকেরও বেশি জনগোষ্ঠী বেকার, পর্যাপ্ত চাকরির ক্ষেত্র তৈরি হয় না, সেই সকল দেশের বিকল্প পেশা হিসেবে বর্তমান সময়ে সম্মানজনক অবস্থায় আছে ফ্রিল্যান্সিং। আর ফ্রিল্যান্সিং জগতে বর্তমানে অফুরন্ত সম্ভাবনাময় পেশা হলো গ্রাফিক্স ডিজাইন। একজন ব্যক্তি তার সৃজনশীলতা এবং দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে এই সেক্টরে একটি দুর্দান্ত ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারে।
লোগো ডিজাইন, পাবলিকেশন, পত্রিকা, ব্র্যান্ডিং, ম্যাগাজিন, বই থেকে শুরু করে পোস্টার, বিলবোর্ড, সাইন, ওয়েবসাইট গ্রাফিক্স, প্রোডাক্ট প্যাকেজিং পর্যন্ত সর্বত্র রয়েছে গ্রাফিক্সের ব্যবহার। আর বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যবসাক্ষেত্র আরো সম্প্রসারিত হচ্ছে যার সাথে তাল দিয়ে বাড়ছে গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের চাহিদা। তাই গ্রাফিক্স ডিজাইনে দক্ষতা অর্জন করা আপনার জন্য হতে পারে একটি সমপরিয়োযোগী সিদ্ধান্ত। এরপরেও আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা প্রশ্ন করে গ্রাফিক্স ডিজাইন কেন শিখব? গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। যেগুলো বর্ণনা করে শেষ করতে পারবো না। যাইহোক, নিম্নে কিছু কারণ সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলোঃ
সৃজনশীল পেশা
গ্রাফিক্স ডিজাইন একটি পরিপূর্ণরূপে সৃজনশীল পেশা। এই সেক্টরে আপনার পুঁথিগত বিদ্যা তেমন একটা কাজে আসবে না। এই সেক্টরে সৃজনশীলতাই আপনার মূল হাতিয়ার। এক্ষেত্রে আপনি যদি সৃজনশীল হন, নতুন কোন কিছু করতে আগ্রহী হন, তাহলে আপনার জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইন পারফেক্ট একটা পেশা হবে বলে আমরা মনে করি।
আরো পড়ুনঃ মোবাইলে ইনকাম সাইট প্রতিদিন আয় করুন 1000 টাকা 2024
এই সেক্টরে গ্রাফিক্স ডিজাইনের বিভিন্ন টুলস ব্যবহার করে আপনি যত বেশি সৃজনশীলতার সাথে আপনার আইডিয়াগুলো ফুটিয়ে তুলতে পারবেন ততই আপনার কাজের কোয়ালিটি উন্নত হবে। আপনাকে ধৈর্য ধরে কাজ করতে হবে। সহজেই সাফল্য আসবে না। মনে রাখবেন কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না।
উচ্চতর চাহিদা
বর্তমান যুগ আধুনিক যুগ। এই যুগে ভিজুয়াল কনটেন্ট সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। যার সাথে সাথে গ্রাফিক্স ডিজাইনও অনেক চাহিদা পূর্ণ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে ওয়েবসাইটের সকল কাজের জন্য এখন গ্রাফিক্স ডিজাইন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রয়োজনীয়তা দিন যত যাচ্ছে ততই বেড়েই চলছে। আর বর্তমানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রায় সকল কাজের জন্য এই গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রয়োজন পড়ে। যার কারণে গ্রাফিক্স ডিজাইনের চাহিদা বর্তমানে অনেক বেশি।
উচ্চ বেতন স্কেল
বর্তমান বাজারে চাকরি করে আপনি প্রতি মাসে যে টাকা ইনকাম করতে পারবেন, তার চাইতেও বেশি অর্থ আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইন করে প্রতি মাসে ইনকাম করতে পারবেন। তবে হ্যাঁ এর জন্য অবশ্যই আপনার কাজের ভালো কোয়ালিটি থাকতে হবে।
স্বাধীন পেশা
স্বাধীন পেশা বলতে আসলে আমরা কি বুঝি। আমার মন যখন চাইবে তখন আমি কাজ করবো, মন না চাইলে করবো না, এটাই তো নাকি। আর আপনি যদি একজন স্বাধীনচেতা মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে গ্রাফিক্স ডিজাইন আপনার জন্য পারফেক্ট। আপনি যদি ইচ্ছা করেন তাহলে এই সেক্টরে নিজেই একটি ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করতে পারেন, আবার আপনি যদি চান যে বিভিন্ন পোর্টফোলিও তৈরি করে বিভিন্ন ক্লাইন্টের সাথে কাজ করবেন তাও করতে পারবেন। অর্থাৎ আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইনে যেভাবে চাইবেন সেভাবেই কাজ করতে পারবেন।
বাড়িতে বসে কাজের সুযোগ
গ্রাফিক্স ডিজাইন সেক্টরে কাজ করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল আপনি যেকোনো জায়গায় বসে এই কাজ করতে পারবেন। শুধু আপনার কাছে ইলেকট্রিসিটি, ইন্টারনেট এবং একটি ভাল মানের কম্পিউটার বা ল্যাপটপ বা গ্রাফিক্স ট্যাবলেট থাকলেই হবে। এই সেক্টরে আপনাকে অফিসে যে কাজ করতে হবে না।
চাকরির সুযোগ
একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে আপনি বিভিন্ন দেশি-বিদেশি কোম্পানিতে চাকরি করতে পারেন। এছাড়া আপনি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলোতে গ্রাফিক্স ডিজাইন নিয়ে কাজ করে, বেশি ক্লায়েন্টদের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে পারেন এবং তাদের দেশের কোম্পানির সাথেও কাজ করার সুযোগ পেতে পারেন। তবে হ্যাঁ এর জন্য আপনাকে অবশ্যই গ্রাজুয়েট এবং এই বিষয়ক সার্টিফাইড হতে হবে ইত্যাদি।
উপরে উল্লেখিত কারণগুলো ছাড়াও গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার আরো অনেক কারণ রয়েছে। যেগুলো নিম্নে পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হলোঃ
- প্রতিভা দেখানোর সুযোগ
- উচ্চ শিক্ষার প্রয়োজন নেই
- উজ্জল ভবিষ্যৎ তৈরি করার সুযোগ
- ফ্রিলান্সিং ও আউটসোর্সিং করে অর্থ উপার্জন করার সুযোগ
- মার্কেটিং এবং ব্রান্ডিং করার সুযোগ ইত্যাদি
গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে কত দিন লাগে
আমাদের মাঝে এমন অনেকেই রয়েছে যারা প্রশ্ন করেন যে গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে কতদিন লাগে? সত্য কথা বলতে গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে যে কতদিন লাগবে এটি সম্পূর্ণ আপনার উপরই নির্ভর করে। গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রতি যদি আপনার আগ্রহ বেশি থাকে তাহলে আপনি অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই এটি রপ্ত করতে পারবেন। কিন্তু আপনি যদি শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে চান অথবা আপনার গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রতি কোন রকম আগ্রহ না থাকে তাহলে আপনার এটি শিখতে অনেকটা লাগবে। আশা করি আপনারা বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।
একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের মাসিক আয় কত?
আচ্ছা একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের মাসিক আয় কত? এই প্রশ্নটি গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কে এত কিছু জানার পরে আপনার মনে জাগতেই পারে। একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার মাসিক ৪০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারে। তবে গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের মধ্যে যারা বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজ করে তারা প্রতি মাসে $৫০০ ডলার থেকে শুরু করে $৫০০০ ডলার এমনকি তারও বেশি অর্থ ইনকাম করতে পারে। তবে একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের মাসিক বেতন তার অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, কর্মসংস্থান, এলাকা, কাজের ধরন ও অন্যান্য বিষয়গুলোর উপর নির্ভর করে কমবেশি হতে পারে।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক বৃন্দ, এই পোস্টটিতে মূলত গ্রাফিক্স ডিজাইন কি, গ্রাফিক্স ডিজাইন কত প্রকার, গ্রাফিক্স ডিজাইন কেন শিখব ইত্যাদি সব গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। বর্তমান যুগ আধুনিক যুগ। এই যুগে বসে থাকলে চলবে না। এখন সময় এসেছে কাজে লেগে পড়ার। গ্রাফিক্স ডিজাইনের যে পন্থাটি আপনার ভালো লাগে সেটি দ্রুত শিখে ফেলুন এবং ঢুকে পড়ুন জব মার্কেটে এবং গড়ে তুলুন আপনার উজ্জ্বল ক্যারিয়ার। আর গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কে যদি আরও তথ্য জানতে চান তাহলে কমেন্ট বক্সে আপনার প্রশ্নটি জানিয়ে রাখুন। আর এই পোস্টটি যদি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে অন্যদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদ।
Please comment according to Blogger Mamun website policy. Every comment is reviewed.
comment url