সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার উপায় ও আবেদন
অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার স্বপ্ন অনেকেই দেখে। অনেকেই চায় অন্তত কাজের ভিসায় হলেও অস্ট্রেলিয়া যেতে। কিন্তু কিভাবে? এই প্রশ্ন অনেককেই কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। অনেকেই দালাল ধরে অস্ট্রেলিয়া যেতে চাই, কিন্তু দিন শেষে দালালের চক্করে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে ফেলে। আর তাই আজকের এই পোস্টটিতে আমরা সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার উপায় ও আবেদন করার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। যেখানে দালালের কোন ধরনের সুযোগ থাকে না।
সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার উপায়
বিশ্বের সকল উন্নত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দেশ অস্ট্রেলিয়া। যেখানে কাজের চাহিদাও যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে বেতনও। আর তাইতো প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ অস্ট্রেলিয়া যেতে চাই। কিন্তু বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া ভিসা জালিয়াতিল খবর প্রায়ই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখা যায়। একটি অসা*ধু*চক্র অস্ট্রেলিয়া ভিসা জালিয়াতি করে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তাই সর্বদা দালাল থেকে সাবধান থাকবেন। মনে রাখবেন টাকা দিয়ে, দালাল ধরে কিংবা প্রভাব খাটিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা পাওয়া যায় না।
আরো পড়ুনঃ অস্ট্রেলিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ফি ফর বাংলাদেশী
অস্ট্রেলিয়ার ভিসা সর্বদা সরকারিভাবেই পাওয়া যায়। তবে এর জন্য আপনার অবশ্যই আইইএলটিএস এ ৫.৫ স্কোর থাকতে হবে এবং ব্যাংকে মিনিমাম ৫ লক্ষ টাকা থাকতে হবে। এছাড়াও আপনি সরকারিভাবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান বোয়েসেলের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ায় কাজের ভিসা নিয়ে যেতে পারেন। বোয়েসেল বাংলাদেশের একটি অন্যতম স্বনামধন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান যেটি শুধু বিদেশে কর্মী পাঠিয়ে থাকে। আপনি চাইলে এই প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে আপনার স্বপ্নের দেশ অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমাতে পারেন।
সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আবেদন
সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আবেদন সাধারণত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে করা হয়। সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার জন্য আবেদন করার যে প্রক্রিয়াটি রয়েছে সেটি বিভিন্ন ধরনের ভিসা ও মিগ্রেশন প্রোগ্রামের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হতে পারে। কারণ অস্ট্রেলিয়া সরকার বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসা প্রোগ্রাম অফার করে থাকে। যেমন ওয়ার্ক ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা, বিজনেস ভিসা, ভিজিট ভিসা, মেডিকেল ভিসা ইত্যাদি। এখন আপনি কোন ক্যাটাগরির ভিসায় অস্ট্রেলিয়া যাবেন সেটা আপনাকে নির্বাচন করতে হবে। এরপর অস্ট্রেলিয়ার সরকারি অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে ভিসা আবেদন করতে হবে। এখন আপনি যদি সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চান তাহলে নিম্নে উল্লিখিত ধাপ গুলো অনুসরণ করুন।
ধাপ-১ঃ প্রথমে আপনি অস্ট্রেলিয়ার অফিসিয়াল ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইটে গিয়ে অস্ট্রেলিয়া ইমিগ্রেশন প্রসেস, ভিসা ক্যাটাগরি, যোগ্যতা, আবেদন ফরম, ফি এবং অস্ট্রেলিয়া ভিসা সম্পর্কিত অন্যান্য তথ্য গুলি অনুসন্ধান করুন।
ধাপ-২ঃ তথ্য অনুসন্ধান করা হয়ে গেলে এবার ওয়েবসাইটটিতে রেজিস্ট্রেশন করে নিজের নামে একটি নতুন অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশে সিঙ্গাপুর ভিসা এজেন্টদের লিস্ট
ধাপ-৩ঃ এরপর অস্ট্রেলিয়া ভিসার আবেদন করার জন্য একটি উপযুক্ত ভিসা ক্যাটাগরি নির্বাচন করুন এবং একটি আবেদন ফরম সংগ্রহ করুন।
ধাপ-৪ঃ এই ধাপে নির্দিষ্ট ভিসা ক্যাটাগরির অনুমোদিত ফরম ভালোভাবে পূরণ করুন এবং প্রয়োজনীয় তথ্য ও প্রমাণপত্র সংগ্রহ করুন এবং ভিসা আবেদন ফি প্রদান করুন।
ধাপ-৫ঃ এবার আবেদন ফরম এবং তার সাথে প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্ট সহ আবেদনটি অনলাইনে জমা দিন।
ধাপ-৬ঃ আবেদনটি জমা দিলে আপনার ভিসা প্রসেসিং শুরু হবে৷ এবং এটি শেষ হতে আনুমানিক ৬ থেকে ৮ মাস সময় লাগতে পারে। এই সময় পর্যন্ত ধৈর্য ধরুন।
সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া যেতে কি কি লাগে
আপনি যদি সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া যেতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার মাঝে কোনো না কোনো যোগ্যতা থাকতে হবে। এরপর আপনার উদ্দেশ্য অনুযায়ী উপযুক্ত ভিসা ক্যাটাগরী নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন ভিসা ক্যাটাগরি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আলাদা আলাদা হয়। তাই অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ার ভিসার জন্য আবেদন করার সময় সতর্ক থাকবেন। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য হলো অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা পাওয়ার জন্য আপনার বয়স অবশ্যই ১৮ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে হতে হবে। এছাড়াও সরকারি ভাবে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার জন্য যে সকল ডকুমেন্টসের প্রয়োজন হবে তার একটি তালিকা নিম্নে তুলে ধরা হলো।
আরো পড়ুনঃ কুয়েতে সর্বনিম্ন বেতন কত
- ভ্যালিড ই-পাসপোর্ট
- অস্ট্রেলিয়ার ভিসা ফরম (ক্যাটাগরি অনুযায়ী)
- পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট
- মেডিকেল ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
- সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- ইংরেজি ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট (আইএলটিএস ৫.৫ স্কোর)
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- আয়ের উৎসের প্রমাণপত্র
- নিয়োগকর্তার অনুমতি পত্র
- কাজের অভিজ্ঞতার প্রমাণ পত্র
- প্রদত্ত ভিসা ফি
- এনআইডি কার্ডের ফটোকপি
- অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানের ঠিকানা ও নিয়োগ কর্তার ঠিকানার তথ্য
দুবাই থেকে অস্ট্রেলিয়া যেতে কত টাকা লাগে?
আপনাদের মাঝে অনেকেই দুবাই থেকে অস্ট্রেলিয়া যেতে কত টাকা লাগে এই প্রশ্নটি করে থাকেন। যাইহোক এই পোষ্টের এই অংশটিতে আমরা এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি নিয়ে হাজির হয়েছি। আপনি যদি এই অংশটি পড়েন আশা করি এই প্রশ্নের উত্তরটি আপনি পেয়ে যাবেন।
দুবাই থেকে অস্ট্রেলিয়া ভিসার খরচ সাধারণত ভিসার ক্যাটাগরির উপর নির্ভর করে কম বেশি হয়। অর্থাৎ আপনি যদি দুবাই থেকে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে অস্ট্রেলিয়া যেতে চান তাহলে আপনার আনুমানিক প্রায় ৪ লক্ষ থেকে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। আবার আপনি যদি ভিজিট ভিসা নিয়ে দুবাই থেকে অস্ট্রেলিয়া যেতে চান তাহলে আপনার আনুমানিক প্রায় ৮ লক্ষ থেকে ১৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। আবার আপনি যদি কাজের ভিসায় দুবাই থেকে অস্ট্রেলিয়া যেতে চান তাহলে আপনার আনুমানিক প্রায় ১৫ লক্ষ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ কুয়েত কোম্পানি ভিসা বেতন কত
অর্থাৎ বোঝা গেল ভিসার ক্যাটাগরি অনুযায়ী খরচের পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন। তবে হ্যাঁ আপনি যদি সরকারিভাবে দুবাই থেকে অস্ট্রেলিয়া যেতে পারেন তাহলে আপনার খরচ অনেক কমে যাবে। আর বেসরকারি ভাবে গেলে সাধারণত এর খরচ একটু বেশি হয় কারণ এখানে অনেক এজেন্সির সহযোগিতা লাগে। তবে হ্যাঁ দালাল থেকে সাবধান থাকবেন। সব সময় সরকারি ভাবে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।
বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যেতে কত টাকা লাগে?
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ থেকে অনেকেই অস্ট্রেলিয়া যায়। এদের মধ্যে কেউ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে অস্ট্রেলিয়া যায় আবার কেউ কাজের উদ্দেশ্যে অস্ট্রেলিয়া যায় আবার কেউ পড়াশোন উদ্দেশ্যে অস্ট্রেলিয়া যায়। কিন্তু এদের মধ্যে আবার এমন অনেকেই আছে যারা বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যেতে কত টাকা লাগে তা জানে না। তাই এই পোষ্টের এই অংশটিতে আমরা বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যেতে কত টাকা লাগে তা তুলে ধরব।
সাধারণত বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কয়েকটি ভিসা রয়েছে। এক্ষেত্রে আপনি যদি স্টুডেন্ট ভিসায় বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যান তাহলে আপনার ৪ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়বে। আবার আপনি যদি টুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যান তাহলে আপনার ২ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়বে। আবার আপনি যদি কাজের ভিসায় বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যান তাহলে আপনার মোট ১০ লক্ষ থেকে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
বিঃদ্রঃ ভিসার ধরন, দাম, বিমানের ধরন, টিকিটের দাম ইত্যাদি বিষয়গুলো উপর নির্ভর করে বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার খরচের পরিমাণ কম বেশি হতে পারে।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক বৃন্দ, আজকের এই সম্পূর্ণ পোস্টটিতে আমরা সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার উপায় ও আবেদন করার নিয়ম এবং সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া যেতে কি কি লাগে বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমরা সর্বদা চেষ্টা করেছি আপনাদেরকে সঠিক তথ্য জানানোর জন্য। তারপরও যদি আমাদের কোন ভুল ভ্রান্তি হয়ে থাকে আশা করি আপনারা আমাদের সেই ভুলগুলোকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর হ্যাঁ সরকারিভাবে বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার সময় অবশ্যই দালাল এড়িয়ে চলবেন। মনে রাখবেন টাকা দিয়ে, দালাল ধরে কিংবা প্রভাব খাটিয়ে কখনো অস্ট্রেলিয়ার ভিসা পাওয়া যায় না। আর সব সময় সরকারিভাবেই অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার চেষ্টা করবেন।
আরো পড়ুনঃ ইউরোপ মহাদেশের দেশগুলোর নাম ও রাজধানী
আশা করি আপনারা সবাই আজকের এই পোস্টটি থেকে সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার উপায় ও আবেদন করার নিয়ম জানতে পেরেছেন। এছাড়াও কি কি কাগজপত্র লাগে সেই বিষয়ে জানতে পেরেছেন। সুতরাং এই পোস্টটি যদি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করে আমাদের পাশে থাকবেন। ইনশাল্লাহ সামনে আমরা আপনাদের সামনে আরো নতুন নতুন তথ্য নিয়ে হাজির হব। তাই নতুন নতুন তথ্য জানতে প্রতিদিন Bloggermamun ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।
Please comment according to Blogger Mamun website policy. Every comment is reviewed.
comment url