করমচা বা কারেন্ট ফলের উপকারিতা জেনে নিন

কারেন্ট ফল অনেক পুষ্টিকর ও গুনাগুন সম্পূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও অনেকেই এই ফলটি সম্পর্কে অজানা। তাই এই পোস্টটিতে আমরা কারেন্ট ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা, কারেন্ট ফল কি, কারেন্ট ফলে ইতিহাস, কারেন্ট ফলের পুষ্টিগুণ ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো। যাতে করে আপনারা কারেন্ট ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারেন।যদিও কারেন্ট ফল সকলের অবহেলিত একটি ফল কিন্তু এই ফলের পুষ্টিগুণ মোটেও অবহেলা করার মত নয়।

করমচা বা কারেন্ট ফলের উপকারিতা
কারণ কারেন্ট ফলের পুষ্টিগণ অনেক বেশি। আর কারেন্ট ফলের উপকারিতা তো আছেই। তাই আপনারা যারা কারেন্ট ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান। তারা এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তাহলে কারেন্ট ফলের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবেন।

করমচা বা কারেন্ট ফল কি - করমচা বা কারেন্ট ফলের উপকারিতা

করমচা বা কারেন্ট ফল যাকে অনেকে আবার ইংরেজিতে বেঙ্গল কারেন্ট (Bengal currant) ফল নামেও চেনেন। সাধারণত কারেন্ট ফল টক জাতীয় স্বাদের হয়। কারেন্ট ফল ছোট আকৃতির একটি ফল। কারেন্ট ফলের গাছটি অত্যান্ত বিষাক্ত ও কাঁটাযুক্ত হয়ে থাকে। কারেন্ট ফল একটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ বা গাছের ফল। কারেন্ট ফলের গাছ সাধারণত প্রাকৃতিকভাবেই বিভিন্ন জায়গায় জন্ম নেয়। 

তবে করমচা বা কারেন্ট ফলের উদ্ভিদটি সাধারণত এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং আফ্রিকা মহাদেশে বেশি পাওয়া যায়। এছাড়াও এই ফলটি আপনি ভারতীয় উপমহাদেশের কিছু কিছু জায়গায় পাবেন। এই ফলটি সাধারণত কাঁচা অবস্থায় সবুজ বর্ণের হয় এবং পাকার পরে এই ফলটি ম্যাজেন্টা লাল-রং ধারণ করে। আপনারা এই ফলটি বিভিন্নভাবে উপভোগ করতে পারেন। তাই এই ফলটিকে অনেকে বহুমুখী কারেন্ট ফল নামেও বলে থাকে।

আরো পড়ুনঃ ড্রাগন ফলের উপকারিতা জেনে নিন

কারেন্ট ফল আপনি বিভিন্নভাবে উপভোগ করতে পারবেন যেমন- রান্না করে খেতে পারবেন, জ্যাম বা জেলি তৈরি করে খেতে পারবেন, সালাদ বা ডেজার্ট তৈরি করে খেতে পারবেন ইত্যাদি। কারেন্ট ফলের উপকারিতা যেমন অনেক তেমনি এই ফলের স্বাদও অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। কারেন্ট ফল এমন একটি ফল যা আপনি একবার খেলে বারবার খেতে চাইবেন। কারন এই ফলটিতে যখন আপনি কামড় বসাবেন তখন আপনার মনে হবে আপনি অন্যরকম একটা জগতে চলে এসেছে।

কারেন্ট হলে আপনি পাবেন ব্যতিক্রমী মিষ্টতা, অম্লতা এবং অত্যন্ত আনন্দদায়ক এক ধরনের স্বাদ। যা আপনি একবার খেলে আর ভুলতে পারবেন না। কিন্তু এই কারেন্ট ফলটি সম্পর্কে অনেকেই অজানা। অনেকেই কারেন্ট ফলের ইতিহাস এবং কারেন্ট ফলের উপকারিতা সম্পর্কে জানেনা। তাই আপনি যদি কারেন্ট ফলের উপকারিতা ও কারেন্ট ফলের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চান তাহলে পড়তে থাকুন।

করমচা বা ব্লাককারেন্ট এর ইতিহাস - করমচা বা কারেন্ট ফলের উপকারিতা

করমচা বা ব্লাককারেন্ট এর ইতিহাস অনেক পুরনো। সেই প্রাচীনকাল থেকে এই ফলটি প্রচলন হয়ে আসছে। যদিও তখন মানুষ এই ফলটিকে কারেন্ট ফল নামে চিনতো না। কারেন্ট ফল গাছটি একটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। কারেন্ট ফলের গাছটি সাধারণত প্রাকৃতভাবেই জন্ম নেয়। তবে ইদানিং কারেন্ট ফলের চাষ করা হচ্ছে। কারেন্ট ফলের গাছটি বা উদ্ভিদটি আপনারা এশিয়া, আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের দিকে বেশি পাবেন। 

এছাড়াও ভারত মহাদেশে কারেন্ট ফলের গাছটি খুব সহজেই আপনারা পেয়ে যাবেন। কারেন্ট ফল একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। তবে এই ফলটি এখন বর্ষা মৌসুমেও দেখা যায়। কারেন্ট ফলের গাছটি উষ্ণ এবং আর্দ্র জলবায়ুকে দ্বিগুণ হাড়ে বৃদ্ধ পায়। গ্রাম অঞ্চলের দিকে এই ফলটি বেশি দেখা যায়। তবে ইদানিং অনেকে শখের বসে বাড়ির ছাদে এই ফলের বাগান করে। 

কারেন্ট ফল সাধারণত কাঁচা অবস্থায় সবুজ বর্ণের হয় আর পাকলে সাধারণত জমাট বাঁধা রক্তের মত লাল বর্ণের হয়ে থাকে। কারেন্ট ফলের যে গাছটি রয়েছে সেই গাছটিতে সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে ফুল আসে এবং এপ্রিল-মে মাসের দিকে ফল ধরে। আর এই গাছের ফল পাকে বর্ষাকালে।

করমচা বা কারেন্ট ফলের উপকারিতা

ভীষণ টক জাতীয় ছোট ও অত্যন্ত উপকারী এই ফলটি আমাদের সকলের কাছে কারেন্ট ফল বা করমচা অথবা ব্লাককারেন্ট নামে পরিচিত। এই ফলটি বেশিরভাগই পাওয়া যায় আফ্রিকা, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে। আমাদের দেশে সাধারণত গ্রাম অঞ্চলের দিকে কারেন্ট ফল বেশি সহজলভ্য। কারেন্ট ফল আকার আকৃতিতে একটি ছোট হতে পারে কিন্তু এই ফলের পুষ্টি ও স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। এই ছোট্ট ফলটিতে যে পরিমাণ পুষ্টি ও স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে তা আপনি অন্য কোন ফলে খুঁজে পাবেন না।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা জানুন  

প্রতি 100 গ্রাম কারেন্ট ফল থেকে আপনি যে সকল উপকারী পদার্থ পাবেন তা আমরা নিজে জানিয়ে দেবো। এখন চলুন আমরা কারেন্ট ফলের উপকারিতা জেনে নেই। কারণ কারেন্ট ফল বছরে খুব কম সময়ে পাওয়া যায়। তাই কারেন্ট ফলের উপকারিতা সম্পর্কে যদি আপনি জানেন তাহলে অল্প সময়ের জন্য পাওয়া গেলেও আপনি এই ফলটি খেতে আগ্রহী হবেন। তাই চলুন কারেন্ট ফলের উপকারিতা জেনে নেই।

  • কারেন্ট ফল বা করমচা মানব দেহে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। এবং উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করতে সক্ষম এই ফল।
  • আপনারা যারা শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান তারা এই ফলটি খেতে পারেন। কারণ করমচা শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • করমচা ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা খাবারের রুচি বাড়াতে সাহায্য করে।
  • সাধারণত যখন ঋতু পরিবর্তন হয় তখন অনেকেরই সর্দি জ্বর হয়। কিন্তু এই মৌসুমী সর্দি জ্বর নিরাময়ের করমচা অনেক উপকারী।
  • স্কার্ভি দাঁত ও মাড়ির নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধ করতে করমচা বেশ কার্যকারী।
  • করমচাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি যার শরীরে চুলকানি সহ ত্বকের নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
  • অনেক সময় দেখা যায় শরীরের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ হয়। এই শরীরের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ কমাতে করমচা সাহায্য করে।
  • যকৃত ও কিডনির রোগ প্রতিরোধ করতে করমচার ভূমিকা অপরিসীম।
  • করমচাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যার শরীরের দূষণ পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। তাই বাংলাদেশিদের জন্য এটি খুবই উপকারী একটি ফল। কারণ বাংলাদেশের বাতাসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে দূষণ।
  • কৃমি নাশক ওষুধ হিসাবে করমচা কাজ করে থাকে। এছাড়াও পেটের নানা ধরনের অসুখ নিরাময়ে করমচা খুবই উপকারী একটি ফল।
  • শরীরের ক্লান্তি ও বারবার হাই তোলা বন্ধ করতেও করমচার রস বেশ কার্যকারী। করমচাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইডেট যা কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
  • ব্যথা জনিত জ্বর ও বাতের সমস্যা দূর করতে করমচা বেশ উপকারী।
  • হজম শক্তি বৃদ্ধিতে করমচা ফলের ভূমিকা অপরিসীম।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে করমচা ফল বেশ কার্যকারী একটি ফল। যারা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় আছেন তারা এই ফল সেবন করতে পারেন।
  • মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও বেশ কার্যকারী এই করমচা ফল।
  • চোখের দৃষ্টিশক্তি ধরে রাখতে করমচা বেশ উপকারী। কারণ করমচাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ। যা চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে ইত্যাদি।

কারেন্ট ফলের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো আপনি শুধু যে এই কারেন্ট ফল থেকেই উপকারিতা পাবেন এমন নয়। কারেন্ট ফলের পাশাপাশি আপনি এই ফলের গাছের অন্যান্য অংশ থেকেও পাবেন অনেক উপকারিতা। আপনি যদি করমচা গাছের পাতা সিদ্ধ করে সেই পানি পান করে তাহলে আপনার কালাজ্বর আপনি তো নিরাময় হয়ে যাবে।

এছাড়াও কারেন্ট ফলের গাছের শিকরে রয়েছে ক্যারিসন, ট্রাইটারপিন, বিটা স্টেরল, ক্যারিন ডোনা, লিগ নামের মত বিভিন্ন উপাদান। যা হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা নিরাময়ে সাহায্য করে। আশা করছি আপনারা করমচা বা কারেন্ট ফলের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছে। এখন কারেন্ট ফলের অপকারিতা গুলো জানতে পোস্টটি পড়তে থাকুন।

করমচা বা কারেন্ট ফলের অপকারিতা

যদিও করমচা বা কারেন্ট ফলের অনেক উপকারিতা রয়েছে তারপরও এই ফলেরও রয়েছে কিছু অপকারিতা। আপনি যদি এই ফলটি অতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করে। তাহলে আপনি বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে পারেন। তাই এই ফলটি অতিরিক্ত সেবন না করাই ভালো। আর যাদের শরীরে কোলেস্টরেলের মাত্রা বেশি।

আরো পড়ুনঃ ড্রাগন ফল কত টাকা কেজি জেনে নিন  

তাদের ক্ষেত্রে করমচা বা কারেন্ট ফল না খাওয়াই ভালো। তবে করমচা বা কারেন্ট ফলের অপকারিতা নেই বললেই চলে। তবে অবশ্যই করমচা বা কারেন্ট ফল পরিমাণমতো সেবন করতে হবে। কারণ আপনি যেকোনো জিনিস যদি পরিমাণমতো সেবন না করে অতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করে তাহলে সমস্যায় পরবেন এটাই স্বাভাবিক। আশা করি বিষয়টি আপনারা বুঝতে পেরেছেন।

১০০ গ্রাম করমচাতে কি কি উপাদান রয়েছে

ইতিমধ্যে আমরা কারেন্ট ফল কি, কারেন্ট ফলের ইতিহাস, করমচা বা কারেন্ট ফলের উপকারিতা ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানবো ১০০ গ্রাম করমচাতে কি কি উপাদান রয়েছে বা থাকে এই সম্পর্কে।

১০০ গ্রাম করমচাতে যে সকল উপাদান রয়েছে তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো-

  • এনার্জি- ৬২ কিলোক্যালরি
  • প্রোটিন- ০.৫ গ্রাম
  • আইইউ ভিটামিন সি- ৩৮ মিলিগ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট- ১৪ গ্রাম
  • ভিটামিন এ- ৪০ গ্রাম
  • রিবোফ্লেভিন- ০.১ মিলিগ্রাম
  • কপার- ০.২ মিলিগ্রাম
  • নিয়াসিন- ০.২ মিলিগ্রাম
  • পটাশিয়াম- ২৬০ মিলিগ্রাম
  • আয়রন- ১.৩ মিলিগ্রাম
  • ম্যাগনেসিয়াম- ১৬ মিলিগ্রাম 

উপরে উল্লেখিত উপাদান গুলি আপনারা প্রতি ১০০ গ্রাম করমচাতে পাবেন। যার প্রত্যেকটি উপাদানই আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার শরীরে যদি এই উপাদান গুলো সঠিক মাত্রায় থাকে তাহলে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাবে। এবং আপনি কোন সময়ই অসুস্থ বোধ করবেনা। সব সময় থাকবেন সুস্থ।

উপসংহার

এতক্ষণ আপনাদের সাথে করমচা বা কারেন্ট ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি আপনারা করমচা বা কারেন্ট ফলের উপকারিতা সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণ পেয়েছেন। পরিশেষে একটা কথাই বলবো এই ফলটি ছোট বলে কেউ অবহেলা করবেন না। এ ফলটি ছোট হলেও এর পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক বেশি।

আরো ‍পড়ুনঃ পেস্তা বাদামের উপকারিতা জেনে নিন  

আর এই ফলটি যেহেতু বছরের খুব কম সময়ই পাওয়া যায়। তাই যখন এই ফলটি পাবেন তখনই পরিমান মতো খাওয়ার চেষ্টা করবেন। আর অবশ্যই পোষ্টটি যদি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে শেয়ার করে আমাদের পাশে থাকবেন। মনে রাখবেন “স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল”। তাই “সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন”।

Share this post with your friends

See previous post See Next Post
No one has commented on this post yet
Click here to comment

Please comment according to Blogger Mamun website policy. Every comment is reviewed.

comment url