খতিয়ান ও দাগের তথ্য অনুসন্ধান করবেন যেভাবে
প্রিয় পাঠক বৃন্দ, এই পোস্টটিতে আমরা খতিয়ান ও দাগের তথ্য অনুসন্ধান কিভাবে করতে হয়, জমির খতিয়ান বা পর্চা কি, খতিয়ান চেক করা কেন প্রয়োজন এবং খতিয়ান ও দাগের তথ্য অনুসন্ধান করতে কি কি ডকুমেন্টস লাগে ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। যাতে করে আপনারা খতিয়ান ও দাগের তথ্য অনুসন্ধান খুব সহজেই করতে পারেন।
ভূমিকা - খতিয়ান ও দাগের তথ্য অনুসন্ধান
একজন নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই জমি-জমার খতিয়ান ও দাগ সম্পর্কে জানা উচিত। কারন আপনি যদি জমি জমার খতিয়ান ও দাগ সম্পর্কে না জানেন তাহলে দেখবেন আপনার জমি অন্যজন দখল করে নিয়ে গেছে। কিন্তু আপনার যদি জমি জমা খতিয়ান ও দাগ সম্পর্কে জ্ঞান অথবা আপনি যদি খতিয়ান ও দাগের তথ্য অনুসন্ধান করা জানতেন তাহলে কিন্তু আপনার জমি অন্যজন দখল করতে পারত না।
তাই এই পোস্টটিতে আমরা জমির খতিয়ান বা পর্চা কি, খতিয়ান চেক করা কেন প্রয়োজন,
খতিয়ান ও দাগের তথ্য অনুসন্ধান কিভাবে করতে হয় এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা
করেছি। আপনি যদি জমির এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে চান তাহলে পোস্টটি শুরু থেকে
শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
জমির খতিয়ান বা পর্চা কি?
ব্যবসায়ী শিক্ষা বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে খতিয়ান মানে জাবেদা বই। কিন্তু জমির ক্ষেত্রে খতিয়ান আলাদা। খতিয়ান হলো একটি হিসাব নম্বর যা মূলত একজন জমির মালিকের মালিকানাস্বত্ব রক্ষা, স্বার্থ রক্ষা এবং রাজস্ব কর আদায়ের জন্য ভূমি অফিসের ভূমির রেকর্ড জরিপ কর্তৃক সকল ধরনের মৌজার এক বা একের অধিক মালিকের নাম, স্বামী অথবা পিতার নাম,
আরো পড়ুনঃ বি আর এস রেকর্ড কি?
দাগ নম্বর, ভূমির অংশ, ঠিকানা, ভূমির পরিমাণ, খাজনা ইত্যাদি বিষয়গুলোর বিবরণ সহ
ভূমি অফিস বা ডিসি অফিস কর্তৃক যে স্বত্ব প্রস্তুত করা হয় তাকে সাধারণত ভাবে
খতিয়ান বলে। আর খতিয়ানের সার্টিফাইড কপিকে বলা হয় পর্চা। পর্চা আবার বিভিন্ন
ধরনের যেমন মাঠ পর্চা, বুশ্রুত পর্চা, ডিবি পর্চা ইত্যাদি।
খতিয়ান এবং পর্চার মধ্যে সামান্য কিছু পার্থক্য রয়েছে। পর্চাতে সাধারণত জরিপ
কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর উল্লেখ করা থাকে। যা খতিয়ানের থাকে না। এছাড়াও পড়ার
সাথে পুরাতন ও নতুন দুইটা তাগিদ বা দাগ থাকে। আর পর্চ হলো মূল খতিয়ানের একটি
অনুলিপি।
খতিয়ান চেক করা কেন প্রয়োজন?
প্রতিটি জমির জন্য ভিন্ন ভিন্ন খতিয়ান রয়েছে। যেগুলো চেক করা খুবই জরুরী।
কারণ জমির খতিয়ান অনেক সময় অনেক ধরনের কাজে লাগে। নিচে খতিয়ান চেক করার
কিছু প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হলো।
- জমির মালিকানা যাচাই করার ক্ষেত্রে জমির খতিয়ানের প্রয়োজন হয়।
- জমি জমা ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে জমির খতিয়ানের প্রয়োজন হয়।
- সরকারকে খাজনা দেওয়ার সময় জমির খতিয়ানের প্রয়োজন হয়।
- জমির অংশ ভাগ করতে জমির খতিয়ানের প্রয়োজন হয়।
- প্র*তার*ণার হাত থেকে বাঁচার জন্য জমির খতিয়ানের প্রয়োজন হয়।
- জমির আসল মালিকানা বের করার ক্ষেত্রে খতিয়ানের প্রয়োজন হয়।
- জমির সঠিক পরিমাণ বের করার ক্ষেত্রে জমির খতিয়ানের প্রয়োজন হয় ইত্যাদি।
এছাড়াও আরো অনেক কাজে জমির খতিয়ানের প্রয়োজন হয়। যেগুলো আপনি যদি কোন সময়
ভূমি অফিসে কোন জমির কাজ করতে যান তাহলে বুঝতে পারবেন।
জমি কেনার সময় কি কি কাগজপত্র নিতে হয়
অনেক সময় আমাদের মাঝে অনেকেই জমি ক্রয় করে কিন্তু ঠিকঠাক কাগজপত্র না নেওয়ার
কারণে সে প্রতা*রিত হয়। কিন্তু সে যদি জমি কেনার সময় কি কি কাগজপত্র নিতে হয় এ
সম্পর্কে জানতো তাহলে কিন্তু প্রতা*রণার শিকার হতো না তাই এ পোস্টটিতে আমরা জমি
কেনার সময় কি কাগজপত্র নিতে হয় তা নিচে উল্লেখ করেছি। যাতে করে আপনারা জমি
কেনার সময় প্রতা*রিত না হন।চলুন তাহলে জেনে নেই জমি কেনার সময় কি কাগজপত্র
নিতে হয়।
আরো পড়ুনঃ আর এস রেকর্ড কি?
- জমির রেকর্ড বা খতিয়ানের কাগজপত্র গুলো নিতে হবে (যেমন- সি এস, এস এ, আর এস, বি এস, বি আর এস বা সিটি জরিপ খতিয়ান)।
- জমির পূর্বে সকল ধরনের মালিকানা হস্তান্তরের দলিল নিতে হবে।
- নাম খারিজের কপি অথবা নামজারির কপি নিতে হবে। এক্ষেত্রে পূর্বের যত মালিক থাকুক না কেন তাদের নামজারির কপির দরকার নেই শুধুমাত্র বর্তমান মালিকের জমির নামজারির কপি বা খারিজ নিলেই হবে।
- যে বা যারা জমি বিক্রয় করতে চাচ্ছে তার জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি নিতে হবে।
- জমির মৌজা ম্যাপের কপি নিতে হবে (যেমন- সি এস, এ এস, আর এস, সিটি জরিপ মৌজা ম্যাপ)।
- যদি কোন জমির মালিকানা উত্তরাধিকারের মাধ্যমে হস্তান্তরিত হয়ে থাকে তাহলে সেই উত্তরাধিকার ওয়ারিশ সনদ নিতে হবে।
এছাড়াও আরো অনেক বিষয় রয়েছে যেমন খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর ইত্যাদি বিষয়গুলো
এবং উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে জমি ক্রয় করতে হবে।
তাহলে আপনারা প্র*তা*রণার শিকার হবেন না।
খতিয়ান ও দাগের তথ্য অনুসন্ধান করবেন যেভাবে
জমির খতিয়ান ও দাগের তথ্য অনুসন্ধান সাধারণত দুই ভাবে করা যায়।
- অফলাইন এবং
- অনলাইন
অফলাইনঃ আপনি যদি অফলাইনে জমির খতিয়ান ও দাগের তথ্য অনুসন্ধান করতে
চান তাহলে আপনাকে প্রথমে ভূমি অফিসে যেতে হবে। তারপর সেখানকার কর্মকর্তা বা
কর্মচারীদের সহযোগিতা নিয়ে আপনার জমির খতিয়ান ও দাগের তথ্য অনুসরণ করতে হবে।
এক্ষেত্রে অনেক সময় ও খরচের ব্যাপার। তাই অনলাইনে জমির খতিয়ান ও দাগের তথ্য
অনুসন্ধান করাই ভালো। এতে করে আপনার সময় ও খরচ দুটা বাঁচবে।
অনলাইনঃ অনলাইনে জমির খতিয়ান ও দাগের তথ্য অনুসন্ধান কিভাবে করতে হয় তা
ধাপে ধাপে নিচে দেখানো হলো।
১। অনলাইনে জমির খতিয়ান ও দাগের তথ্য অনুসন্ধান করার জন্য আপনাকে প্রথমে www.eporcha.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি যে কোন ব্রাউজার ইউজ করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ বি আর এস খতিয়ান যাচাই যেভাবে করবেন
২। উপরে উল্লেখিত ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর আপনার সামনে নিচের মত একটি ওয়েবসাইট বা ইন্টারফেস আসবে। সেখান থেকে আপনারা সার্ভে খতিয়ান অথবা নামজারি খতিয়ান যেকোনো ধরনের খতিয়ান বের করতে পারবেন। আমরা সার্ভে খতিয়ান এ ক্লিক করলাম।
৩। সার্ভে খতিয়ান এ ক্লিক করার পর আপনার সামনে নিচের মত একটি ইন্টারফেস আসবে। সেখান থেকে আপনাকে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, খতিয়ানের ধরন, মৌজা সিলেক্ট করতে হবে।
৪। ওই বিষয়গুলো সিলেক্ট করার পর আপনার সামনে নিজের মত একটি ইন্টারফেস আসবে। সেখান থেকে খতিয়ানের তালিকায় যে কোন একটি উপর ডাবল ক্লিক করে দেবেন। যেমন আমরা ৪ নং এর উপরে ডাবল ক্লিক করেছি।
৫। এরপর আপনার সামনে নিচের মত একটি ইন্টারফেস আসবে।
যেটি হচ্ছে আপনার জমির খতিয়ান ও দাগের তথ্য।
জমির খতিয়ান ডাউনলোড করবেন যেভাবে
আপনারা ইতিমধ্যে জমির খতিয়ান ও দাগের তথ্য অনুসন্ধান কিভাবে করতে হয় এটি
দেখেছেন এবং শিখেছেন। এছাড়াও আমার মনে হয় নাকি চেষ্টাও করেছেন এবং সফল
হয়েছেন। এখন এই খতিয়ানটি আপনি কিভাবে ডাউনলোড করবেন সেটি আপনাদেরকে ধাপে ধাপে
দেখাবো। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক জমির খতিয়ান ডাউনলোড কিভাবে করতে হয়।
১। উপরে উল্লেখিত যে পদ্ধতিতে আপনি খতিয়ান বের করেছেন সেই খতিয়ান ডাউনলোড করার জন্য আপনাকে খতিয়ান আবেদন এ ক্লিক করতে হবে।
২। তারপর আপনার সামনে নিজের মত একটি ইন্টারফেস আসবে। সেখান থেকে জাতীয় পরিচয় নং, জন্ম তারিখ, মোবাইল নম্বর দিতে হবে।
৩। এরপর আপনাকে নাম, ইমেইল দিলেও হবে না দিলেও হবে, ঠিকানা দিতে হবে।
৪। আপনি খতিয়ানটি দুইভাবে সংগ্রহ করতে পারবেন অফিস কাউন্টার থেকে অথবা ডাকযোগ থেকে। এরপর আপনাকে টাকা পেমেন্ট করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ বি আর এস রেকর্ড সংশোধন করবেন যেভাবে
এখানে দুটি পদ্ধতি রয়েছে যে কোন একটি পদ্ধতিতে টাকা প্রমাণ করবেন তারপরে নিচের ক্যাপচা কোডটি দিয়ে পরবর্তী থাকে ক্লিক করবেন।
৫। এভাবে আপনাকে একটি অন্য পেজে নিয়ে যাবে। যেখানে আপনি বিভিন্ন মাধ্যমে টাকা পেমেন্ট করতে পারেন যেমন- কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ওয়ালেট। সেটা আপনি এখান থেকে যে কোন একটি মাধ্যম সিলেক্ট করে নেবেন।
৬। তারপর pay now এ ক্লিক করবেন এবং yes বাটনে ক্লিক করবেন।
৭। তারপর আপনি যে মাধ্যমটিতে টাকা পেমেন্টের জন্য সিলেক্ট করেছেন সেই মাধ্যমটির একটি ইন্টারফেস আসবে আমরা যেমন বিকাশ সিলেক্ট করেছিলাম তার একটি ইন্টারফেস এসেছে। সেখানে আপনার পার্সোনাল নাম্বার দিয়ে কনফার্ম করে ফিনিশ করবেন। এবং শেষে সাবমিট করে দেবেন।
এখানে আপনার কাজ শেষ। এখন আপনি যে দুটি মাধ্যমে খতিয়ানটি গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন
অর্থাৎ অফিস কাউন্টার অথবা ডাকযোগ সেখান থেকে সংগ্রহ করে নেবে।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক বন্ধু, আশা করি আপনারা এতক্ষণে খতিয়ান ও দাগের তথ্য অনুসন্ধান
কিভাবে করতে হয় তাও দেখেছেন। এবং বাসায় চেষ্টাও করেছেন এবং সফলও হয়েছে। আসলে
জমির খতিয়ান ও দাগ নম্বর খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস। যা আমাদের প্রত্যেকেরই
জানা দরকার। এই পোষ্টটির মাধ্যমে হয়তো আপনারা এতক্ষণে জমির খতিয়ান ও দাগের তথ্য
অনুসন্ধান করা এবং ডাউনলোড করা ইত্যাদি বিষয়গুলো শিখতে পেরেছেন। আর একটা কথা
পোস্টটি যদি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করে আমাদের পাশে
থাকুন।
Please comment according to Blogger Mamun website policy. Every comment is reviewed.
comment url