ফোড়া হলে কি করব - ফোড়া হওয়ার কারণ কি জেনে নিন
যদিও ফোড়া খুবই সাধারণ একটি রোগ। তবে এটি খুবই যন্ত্রণাদায়ক একটি রোগ। ফোড়া হলে অনেকেই সহ্য করতে পারে না। তাই অনেকেই জানতে চাই ফোড়া হলে কি করব বা ফোড়া হওয়ার কারণ কি ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে। তাই এই পোস্টটিতে আমরা ফোড়া হলে কি করব বা ফোড়া হওয়ার কারণ কি, ফোড়া কত প্রকার ও কি কি, দাঁত তোলার পর ফোড়া হলে কি হয় ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে আলোচনা করেছি।
ভূমিকা - ফোড়া হলে কি করব - ফোড়া হওয়ার কারণ কি
ফোড়া হলো কোন অঙ্গ বা টিস্যুর মধ্যে কোন সংক্রমণের কারণে তৈরি হওয়া জমাকৃত পুঁজ। এটি সাধারণত মাইক্রোঅর্গানিজম বা সূক্ষ্ম-জীব, মৃত কোষ, অথবা পুঁজ ও অন্যান্য তরল পদার্থে ভরপুর থাকে। এই রোগটি খুবই সাধারণ কিন্তু খুবই যন্ত্রণাদায়ক একটি রোগ। ফোড়া যার হয় সেই আসলে বুঝতে পারে যে ফোড়ার কি যন্ত্রণা। তাইতো সবাই অতি তাড়াতাড়ি এই ফোড়া থেকে মুক্তি পেতে চায়।
কিন্তু অনেকেই ফোড়া হলে কি করা উচিত বা ফোড়া হলে কি করব অথবা ফোড়া হওয়ার কারণ
কি ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে জানে না। তাই আমরা এই পোস্টটিতে ফোড়া হলে কি করব
বা ফোড়া হওয়ার কারণ কি এছাড়াও ফোড়া কত প্রকার ও কি কি, দাঁত তোলার পর ফোড়া
হলে কি হয় ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে আলোচনা করেছি। তাই আপনি যদি এই বিষয়গুলো
সম্পর্কে জানতে চান তাহলে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
ফোড়া হওয়ার কারণ কি জেনে নিন
ফোড়া আমাদের শরীরের যেকোনো জায়গায় হতে পারে যেমন মুখমন্ডল, মাথায়, কোমরে, বগলের নিচে, মুখে, কানের ভিতর, গোপনা*ঙ্গে, পাছায় ইত্যাদি জায়গায় হয়ে থাকে। যদিও ফোড়া খুবই সাধারণ একটি রোগ। তারপরও আপনি যদি এটি হলে অবহেলা করেন তাহলে অনেক বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ ফোড়া কেন হয়
তাই অবহেলা না করে এর চিকিৎসা করা উচিত। তবে
চিকিৎসা করার আগে আপনার অবশ্যই জানা উচিত ফোড়া হওয়ার কারণগুলো সম্পর্কে।
অনেকগুলো ফোড়ার কারণ রয়েছে যেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।
- ফোড়া হওয়ার মূল কারণ হলো ব্যাকটেরিয়া বা সূক্ষ্ম-জীব (মাইক্রো অর্গানিজম)। যখন কোন ব্যাকটেরিয়া বা সূক্ষ্ম জীব যেমন ছত্রাক, ভাইরাস আমাদের দেহে প্যারাসাইট দ্বারা সৃষ্ট কোন ধরনের ইনফেকশন করে তখন সাধারণত এই রোগটি হয়।
- এই রোগটি সাধারণত যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের শরীরে বেশি দেখা যায়।
- ডায়াবেটিস, কেমোথেরাপি, এইডস, ক্যান্সার আক্রান্ত ইত্যাদি অথবা নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করার ফলে মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যার ফলে ফোড়া হয়ে থাকে।
- মানুষের শরীরে কোন ধরনের অটোইমিউন রোগ থাকলে। শরীরের একই স্থানে বার বার ফোড়া হতে পারে।
- শরীরের বিভিন্ন জায়গা অপরিষ্কার রাখলে তার জন্য ফোড়া হতে পারে। কারণ অপরিষ্কার জায়গায় ব্যাকটেরিয়া সহজেই সংক্রমণ করতে পারে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে ঘামলে ফোড়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ইত্যাদি।
ফোড়া কত প্রকার ও কি কি জেনে নিন
ফোড়া আমাদের শরীরের যেকোনো জায়গায় হতে পারে। এটি খুবই সাধারণ একটি রোগ তবে
খুবই যন্ত্রণাদায়ক। সাধারণত ফোড়া অনেক ধরনের হতে পারে। তার মধ্যে কিছু ফোড়ার
ধরন নিচে উল্লেখ করা হলো।
- বিষফোড়া
- লোম ফোড়া
- গাড় ফোড়া
- বাগী ফোড়া ইত্যাদি
বিষফোড়াঃ তীব্র যন্ত্রণাদায়ক ফোলা এক ধরনের ফোড়া যা ত্বকের সাধারণত স্টাফালোলোকোক্কাস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় সাংঘাতিক আকার ধারণ করে সৃষ্ট হয়। এই ধরনের ফোড়া হলে সাধারণত সেই জায়গায় প্রচুর যন্ত্রণা ও ব্যথা করে। এই ফোড়ার অনেকগুলো ছোট ছোট মুখ থাকে। আর এই ধরনের ফোড়াকে সাধারণত বিষফোড়া বলা হয়ে থাকে।
লোম ফোড়াঃ লোম ফোড়া সাধারণত আমাদের শরীরের বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার
ইনফেকশনের কারণে হয়ে থাকে। এই ফোড়া সাধারণত আমাদের শরীরের লোমকূপের
মাঝে হয়। এ ফোড়া হলে বিষ ফোড়ার মতো প্রচন্ড ব্যথা থাকে না।
আরো পড়ুনঃ ফোড়া হলে কি ঔষধ খাবো
গাড় ফোড়াঃ যে ফোড়া সাধারণত ছোট ছোট মুখ নিয়ে জন্ম হয়ে অনেক বড়
আকৃতি ধারণ করে তাকে সাধারণত গাড় ফোড়া বলা হয়। এই ফোড়া হলে সাধারণত ফোড়ার
ভিতরে অনেক বেশি পরিমাণে পুঁজ জমা হয়।
বাগী ফোড়াঃ যে সকল ফোড়া পাঁচ থেকে সাতটি মুখ নিয়ে অনেক বড় আকৃতি ধারণ
করে সেই সকল ফোড়া কে সাধারণত বাগী ফোড়া বলা হয়।
ফোড়া হলে কি করব?
যখন শরীরের কোন স্থান হঠাৎ করে ফুলে যায় বা লাল হয়ে ব্যথা শুরু হয় তখন আমরা সেই অবস্থাটিকে ফোড়া বলি। আমাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হতে পারে। তবে ফোড়া সাধারণত আমাদের শরীরের উপরিভাগে অর্থাৎ ত্বকের উপরে বেশি হয়ে থাকে। এছাড়াও এটি ত্বকের ভিতরেও হতে পারে।
তবে কিছু কিছু স্থান আছে যেগুলো জায়গায় ফোড়া হলে খুবই যন্ত্রনা হয় যেমন- দাঁতের গোড়া, মলদ্বারের আশেপাশে, টনসিল ইত্যাদি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ফোড়া হলে কি করব? এ প্রশ্নের উত্তর আমরা নিচে আলোচনা করেছি। ফোড়া হলে যা করতে হবে তা হলো।
- ফোড়া হলে সব সময় সুতির হালকা পোশাক পরার চেষ্টা করতে হবে।
- নিয়মিত গোসল করতে হবে এবং ব্যবহৃত পোশাক পরিষ্কার না করে পড়া যাবে না।
- ফোড়া হলে সুগন্ধিময়যুক্ত সাবান ব্যবহার না করাই ভালো।
- গোসল করার সময় গোসলের পানি হালকা গরম করে তাতে নিম পাতা ভিজিয়ে গোসল করলে সবচেয়ে ভালো হবে। এছাড়াও পানিতে হালকা ডেটল ও ব্যবহার করতে পারেন।
- ফোড়া সাধারণত অতিরিক্ত ঘামার ফলে হয়ে থাকে। তাই যারা বেশি জানেন তারা গরমকালে ঠান্ডা পরিবেশে থাকার চেষ্টা করুন।
- ফোড়ার ব্যথা কমাতে আপনারা পেঁয়াজের রস গরম করে ফোড়ার উপর ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এটি ব্যবহারে ব্যথা অনেক অংশ কমে যায়। আর ফোড়া খুব তাড়াতাড়ি পেঁকে যায়।
- আপনার শরীরের যে স্থানে ফোড়া হয়েছে সেই স্থানটি সবসময় খোলা রাখার চেষ্টা করুন
- ফোড়া হলে জীবাণুনাশক মলম ব্যবহার করতে হবে
- জীবাণুনাশক সাবান দেওয়া আক্রান্ত স্থান ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে ইত্যাদি।
তবে সবচেয়ে ভাল হবে যেটি করল তা হলো- আপনার শরীরের যদি কোন জায়গায় ফোড়া
হয় তাহলে প্রথমত সেটিকে কেটে ভেতরে পুঁজ বের করে দিতে হবে। এবং তারপর নিয়মিত
সেই স্থানটির ড্রেসিং করতে হবে। এবং এর সাথে কিছু অ্যান্টিবায়োটিক বা ব্যথানাশক
ওষুধ খেতে হবে।
আর আপনি যদি দেখেন যে ফোড়া কেবলই বের হচ্ছে তখন শুধু অ্যান্টিবায়োটিক খেলে সেরে যাবে। এক্ষেত্রে কেটে ভিতরে পুঁজ বের করে দেওয়ার দরকার নেই। এক্ষেত্রে আপনাকে যে অ্যান্টিবায়োটিক টি খেতে হবে সেটি হলো ক্যাপসুল ফাইক্লক্স ৫০০ মিলিগ্রাম যা দিনে চারবার করে মোট সাত দিন খেতে হবে।
আরো পড়ুনঃ ফোড়া শক্ত হলে করণীয়
বিঃদ্রঃ অস্ত্র পাচার করার ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ভুলেও নিজে নিজে এই কাজ করতে যাবেন না। আর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মেডিসিন খেতে হবে।
দাঁত তোলার পর ফোড়া হলে কি হয় জেনে নিন
অনেক সময় দেখা যায় আমাদের মাঝে অনেকেরই দাঁত তোলার পর তার সেই স্থানে ফোড়া হয়েছে। এটি সাধারণত হয় না তবে অনেকের হতেও পারে। তাই দাঁত তোলার পর সেই স্থানে ফোড়া হলে কি হয় জেনে নিন। কোন ব্যক্তির দাঁত তোলার পর যদি তার সেই স্থানে ফোড়া হয় তাহলে তার সেই স্থানের দাঁতের ধারককলা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, দাঁতের শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ইত্যাদি। তাই এই সময় অবশ্যই ডাক্তারের চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। কারন এই সময় চিকিৎসা গ্রহণ না করলে ইনফেকশন করে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
কোমরে ফোঁড়ার চিকিৎসা কিভাবে করবেন
ফোড়া সাধারণত আমাদের শরীরের কোন একটা জায়গায় ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে
হয়ে থাকে। ফুরফুরা সাধারণত আমাদের শরীরে বিভিন্ন জায়গা হতে পারে
যেমন বগলের নিচে, মাথায়, মুখে, কানের ভিতর, পাছায়, কোমরে, কুঁচকিতে
এছাড়াও ত্বকের উপরে ও ভিতরেও এই রোগ হতে পারে। তবে অনেক সময় দেখা যায়
অনেকের কোমরে ফোড়া হয়। যার কারণে সে উঠতে বা বসতে পারে না। এক্ষেত্রে তার
করণীয় হলো।
ফোড়া কখনোই নিজে নিজে ফাটানো যাবে না এতে করে হিতে বিপরীত হতে পারে। প্রথমত যদি আপনার কোমরে ফোড়া হওয়ার উপক্রম হয় বা আপনি বুঝতে পারেন যে ফোড়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আপনি বিভিন্ন ধরনের এন্টিবায়োটিক ওষুধ আছে যেগুলো খেলে ফোড়া সেরে যাবে। আর আপনার অজান্তেই যদি আপনার কোমরের ফোড়া বড় কোন আকৃতি ধারণ করে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ফোড়া কেটে ভেতর থেকে পুঁজ বের করে দিবেন।
এবং ফোড়া ভালো হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন
করবেন এবং আক্রান্ত স্থান সবসময় পরিষ্কার রাখবেন। এছাড়াও এর পাশাপাশি আপনি কিছু
ঘরোয়া পদ্ধতিতে এই ফোড়া ভালো করতে পারেন। ফোড়া পাকানোর ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো
জানতে ফোড়া পাকানোর ঘরোয়া উপায় এর উপর ক্লিক করুন।
লেখকের শেষ কথা
এতক্ষন হয়তো আপনারা ফোড়া হলে কি করব বা কি করতে হয়, ফোড়া হওয়ার কারণ কি
ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। দেখুন আসলে আমরা ফোড়াকে যতই সাধারণ
ভাবি না কেন এটি কিন্তু তেমন সাধারণ রোগও নয়। আপনি যদি ফোড়া হলে অবহেলা করে
রেখে দেন তাহলে সেটি ইনফেকশন করে আপনার শরীরে বড় কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
তাই ফোড়া হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করুন। আশা করি আপনারা বিষয়টি
বুঝতে পেরেছেন। সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। সুস্থ থাকুন, ভালো
থাকুন।
Please comment according to Blogger Mamun website policy. Every comment is reviewed.
comment url