দলিল তল্লাশি ফি কত - দলিল তল্লাশি অনলাইনে করবেন যেভাবে
তল্লাশি বলতে আসলে আমরা কোন জিনিস খোঁজা-খুঁজি করাকে বুঝি। তবে আপনি কি জমির দলিল তল্লাশি কাকে বলে, দলিল তল্লাশি ফি কত, দলিল তল্লাশি অনলাইনে ও অফলাইনে কিভাবে করতে হয় এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানেন? যদি না জেনে থাকেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। কারণ এই পোস্টটিতে আমরা দলিল তল্লাশি অনলাইনে ও অফলাইনে কিভাবে করতে হয়, দলিল তল্লাশি কাকে বলে, দলিল তল্লাশি ফি কত ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব।
জমির দলিল তল্লাশি কাকে বলে? - দলিল তল্লাশি ফি কত
তল্লাশি বলতে আসলে আমরা কোন জিনিস খোঁজা-খুঁজি করাকে বুঝি। জমির দলিল তল্লাশি বলতে বোঝায়- যখন কোন জমি ক্রয়-বিক্রয় করা হয় অথবা কোন জমির ভায়া দলিল প্রয়োজন অথবা জমি বিক্রয়ের ডেট বা তারিখ সুনির্দিষ্ট ভাবে মনে না থাকে অথবা জমির মূল দলিল হারিয়ে গেছে বা পুড়ে গেছে তখন আমরা যে উপজেলা সাব রেজিস্টার কার্যালয়ে হারিয়ে যাওয়া বা পুড়ে যাওয়া
অথবা ডেট বা তারিখ মনে না থাকা জমির দলিলটি খোঁজাখুজি করি এই খোঁজাখুজিকে মূলত
জমির দলিল তল্লাশি বলা হয়। সহজ ভাষায় বলতে গেলে কোন জমির মূল দলিল হারিয়ে
গেলে বা পুড়ে গেলে সেই দলিল বের করার জন্য সাব রেজিস্টার কার্যালয়ে যে
খোঁজাখুঁজি করা হয় তাকে জমির দলিল তল্লাশি বলে।
আইন মোতাবেক জমির দলিল তল্লাশি করা বৈধ নাকি অবৈধ? জেনে নিন
দেখুন আসলে আপনি যে দেশে থাকবেন সেই দেশের সকল ধরনের আইন মেনে চলা কিন্তু আপনার
কর্তব্য। আর জমির বিষয়টি তো সম্পূর্ণ আইনের সাথে জড়িত। তাই কোন জমির দলিল
তল্লাশির ক্ষেত্রে আপনার অবশ্যই জেনে নেয়া উচিত যে আইন মোতাবেক জমির দলিল
তল্লাশি করা বৈধ নাকি অবৈধ। আর জমি সংক্রান্ত কোনো কাজ করার ক্ষেত্রে আপনার এই
বিষয়টি সম্পর্কে জানা উচিত। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক আইনত জমির দলিল তল্লাশি
করা বৈধ নাকি অবৈধ এই বিষয়টি।
আরো পড়ুনঃ খতিয়ান ও দাগের তথ্য অনুসন্ধান করবেন যেভাবে
ভূমির রেজিস্ট্রেশন আইন ১৯০৮ এর ৬২ ধারা অনুযায়ী- যেকোনো একজন ব্যক্তি
(অবশ্যই নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তি হতে হবে) ভূমি আইনের বিধান মেনে লিপিবদ্ধ
বহি নকল করতে পারবে। এবং ১৯০৮ সালের ৫৭ ধারায় উল্লেখ আছে যে- আবেদনকারী
নির্দিষ্ট ফি পরিশোধ করার পর তার ৩ নং বহি লিপিবদ্ধ করতে পারবে এবং আবেদনকারীর
প্রয়োজন অনুযায়ী ৩ নং বহির সূচিপত্র নকল করতে পারবে।
এছাড়াও ভূমি রেজিস্ট্রেশন আইন ১৯০৮ এর ৫৭ ধারায় বলা আছে- আবেদনকারী তার
জমির দলিল তল্লাশির জন্য সাব রেজিস্টার এর মাধ্যমে তিন নং এবং ৪ নং বহির সূচিপত্র
নকল করতে পারবে। আর এই দিক থেকে যদি বিবেচনা করা হয় তাহলে- একজন ব্যক্তি
চাইলে যে কোন বছরের দলিল তল্লাশি বা খোঁজাখুঁজি করতে পারবে। আশা করি আপনারা আইন
মোতাবেক জমির দলিল তল্লাশি করা বৈধ নাকি অবৈধ এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। আর দলিল
তল্লাশি অনলাইনে কিভাবে করবেন এই বিষয়ে জানার জন্য পোস্টটি পড়তে থাকুন।
জমির দলিল তল্লাশির প্রয়োজন হয় কেন? জেনে নিন
অনেক কারণেই জমির দলিল তলাশীর প্রয়োজন হতে পারে। যেমন ধরুন, আপনি ২০-৩০ বছর আগে একটি জমি কিনেছিলেন। এবং সেই জমির দলিল সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু দুর্ঘটনাবশত আপনার সেই জমির দলিলটি হারিয়ে গেছে বা পুড়ে গেছে অথবা আপনার সেই দলিলটির নাম্বার অথবা কোন তথ্য মনে নেই। এখন সেই জমি নিয়ে আপনার যদি কোন মামলা মোকদ্দমার জটিলতা দেখা দেয় তাহলে কিন্তু আপনার সেই জমির দলিলটি প্রয়োজন।
তখন কিন্তু আপনার জমির দলিল তল্লাশি ছাড়া বিকল্প কোনো পদ্ধতিতে সেই দলিলের নকল
তুলতে পারবেন না। অর্থাৎ আপনাকে সেই কাঙ্ক্ষিত দলিলটি খুঁজে বের করার জন্য
তল্লাশি করতে হবে। তাই জমির দলিল তল্লাশির প্রয়োজনীয়তা অনেক। আশা করি আপনারা
বুঝতে পেরেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে জমির দলিল তলাশীর প্রয়োজনীয়তা জানলেন।
কিন্তু আপনি কি দলিল তল্লাশির ফি জানেন? যদি না জেনে থাকেন তাহলে পোস্টটি পড়তে
থাকুন।
দলিল তল্লাশি ফি কত? - দলিল তল্লাশি অনলাইনে
আমাদের মাঝে অনেকে আছে যারা জমির দলিল তল্লাশি কাকে বলে, জমির দলিল তলাশীর
প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি বিষয়গুলো জানে কিন্তু দলিল তল্লাশি ফি কত সম্পর্কে
জানেনা। তাই অনেকেই প্রশ্ন করে দলিল তল্লাশি ফি কত এ সম্পর্কে। চলুন তাহলে জেনে
নেই দলিল তল্লাশি ফিস কত?
আরো পড়ুনঃ জমির খতিয়ান ডাউনলোড করবেন যেভাবে
- উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ১০-১৫ বছর পূর্বের জমির দলিল তল্লাশির ক্ষেত্রেঃ যে সকল দলিল রেকর্ড বইয়ে রেকর্ড হয়ে গেছে এক্ষেত্রে সেই দলিলের পূর্ববর্তী বছরগুলোর জন্য প্রতিবছর ২০০ টাকা করে ফি নেবে। এক্ষেত্রে আপনাকে যে সকল ইনফরমেশন বা তথ্য দিয়ে আসতে হবে তা হলো-
- দাতা ও গ্রহীতার নাম
- জমির পরিমাণ
- জেলা ও উপজেলার নাম
- মৌজার নাম
সম্ভব হলে দলিলের মূল্যটা ইত্যাদি তথ্যগুলো দিয়ে আসতে হবে।
- চলতি বছর গুলোতে জমির তল্লাশি ক্ষেত্রেঃ চলতি বছর বলতে বিগত ৩-৪ বছরের রেকর্ড কে বুঝায়। এই বছরগুলোতে জমির দলিল তল্লাশি দিতে আপনার তল্লাশি ফি লাগবে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা।
- জেলা রেকর্ড রুমে বা অফিসে ২০ থেকে ২৫ বছর পূর্বের দলিল তল্লাশি ক্ষেত্রেঃ ২০ থেকে ২৫ বছর পূর্বে দলিল তল্লাশির ক্ষেত্রে আপনার তল্লাশি ফি লাগবে প্রতি বছরের জন্য ২০০ টাকা করে। এটা অনেক সময় বেশি হতে পারে। তবে সাধারণত ২০০ টাকা করে হয়।
আশা করি আপনারা দলিল তলাশি ফি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এখন দলিল তল্লাশিতে কি কি
লাগবে এ সম্পর্কে জানতে পড়তে থাকুন।
দলিল তল্লাশিতে কি কি লাগে
উপজেলা ভূমি অফিসে বা সাব-রেজিস্ট্রি ভূমি অফিসে জমির দলিল তল্লাশি দিতে যা যা
লাগে তা হলো।
- দাতা ও গ্রহীতার নাম
- দাতা ও গ্রহীতার পিতার নাম
- দাতা ও গ্রহীতার উভয়ের ঠিকানা
- জেলা ও উপজেলার নাম
- মৌজার নাম
- দলিলের দাগ ও খতিয়ান নম্বর ইত্যাদি
আর দলিল তল্লাশি করতে আরও সহজ হবে যদি আপনি আপনার দলিলের সি এস, আর এস, বি এস বা
বি আর এস ইত্যাদি তথ্যগুলো দিয়ে দেন।
দলিল তল্লাশি অফলাইনে করবেন যেভাবে
কোন জমির দলিল তল্লাশি অফলাইনে করার জন্য দুটি অবস্থা বা পদ্ধতি রয়েছে। তা
হলো-
আরো পড়ুনঃ বি আর এস খতিয়ান যাচাই যেভাবে করবেন
- যদি মূল দলিল থাকে
- যদি মূল দলিল না থাকে
যদি মূল দলিল থাকেঃ যদি আপনার কাছে জমির মূল দলিল থাকে তাহলে ভূমি
রেজিস্ট্রি অফিসে আপনার দলিলের রেজিস্ট্রি কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরে আপনার মূল
দলিলের শেষের পৃষ্ঠার উল্টো দিকে “দলিলটি কত সালের, দলিলটি কত নাম্বার বললাম
বইয়ের কত নাম্বার পৃষ্ঠা থেকে কত নাম্বার পৃষ্ঠায় নকল করা হয়েছ” ইত্যাদি তথ্য
গুলো লিখে ভূমি সাব রেজিস্টার কর্তৃক স্বাক্ষর করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি এই
তথ্যগুলো দিয়ে খুব সহজেই আপনার জমির দলিলের নকলটি উঠাতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার
তল্লাশির কোন প্রয়োজন হবে না।
যদি মূল দলিল না থাকেঃ এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই তল্লাশির মাধ্যমে
দলিলটি বের করতে হবে। যদি আপনার কাছে মূল দলিল না থাকে তাহলে ভূমি রেজিস্ট্রি
অফিসে আপনার দলিলের রেজিস্ট্রি কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
দিয়ে একটি সূচিবহি তৈরি করতে হবে। সূচিবহি তৈরি করার ক্ষেত্রে আপনাকে
দলিলে উল্লিখিত জমির দাতা অথবা বিক্রেতা, গ্রহীতা অথবা ক্রেতা, অন্য কোন পক্ষের
নাম এবং মৌজার নাম দিতে হবে।
এখন আপনাকে ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসে নির্দিষ্ট পরিমাণে ফি পরিশোধ করে উপরে উল্লেখিত
সূচিবহি দিয়ে তল্লাশি করে আপনার কাঙ্খিত দলিলটি খুঁজে বের করতে পারবেন।
দলিল তল্লাশি অনলাইনে করবেন যেভাবে
আমাদের মাঝে অনেক মানুষই রয়েছেন যারা আসলে আমাদের কাছে জানতে চাই যে দলিল তল্লাশি অনলাইনে কিভাবে করব বা কিভাবে অনলাইন থেকে দলিল তল্লাশি করে বের করব ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে। তো যারা এই ধরনের প্রশ্ন আমাদেরকে করেন তাদের উদ্দেশ্যে বলবো।
বর্তমানে অনলাইনে আপনি জমির দলিল তল্লাশি করতে পারবেন কিন্তু সেই দলিলটি বের করা
সম্ভব নয়। কারণ, অনলাইনে আপনি শুধু জমির খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, বি আর এস, আর
এস, সি এস ইত্যাদি জিনিসগুলো বের করতে পারবেন। কিন্তু আপনি কখনোই অনলাইন
থেকে জমির প্রকৃত দলিল বের করতে পারবেন না।
আরো পড়ুনঃ বি আর এস রেকর্ড সংশোধন করবেন যেভাবে
জমির দলিল তল্লাশি করার জন্য আপনাকে অবশ্যই ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসে যেতে হবে। এবং
আপনার জমির প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদেরকে দিয়ে আপনার জমি
দলিল তল্লাশি করতে পারবেন। এবং সেই জন্য আপনাকে অবশ্যই নির্ধারিত ফি দিতে হবে। তো
আপনারা যারা অনলাইন থেকে জমির দলিল তল্লাশি করে বের করতে চান তারা অযথা সময় নষ্ট
করবেন না। কারণ অনলাইন থেকে আপনি শুধু খতিয়ান বা দাগ নম্বর, আর এস ইত্যাদি
বিষয়গুলো বের করতে পারবেন কিন্তু জমির মূল দলিল কখনোই বের করতে পারবেন না।
লেখকের শেষকথা
অনেক সময় অনেক কারণে জমির দলিল তল্লাশি করার প্রয়োজন পড়ে। এক্ষেত্রে আপনি
কিভাবে আপনার জমির দলিল তল্লাশি করতে পারবেন, দলিল তল্লাশি ফি কত, দলিল তল্লাশি
করা প্রয়োজন কেন, দলিল তল্লাশি করতে কি কি লাগে ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে
হয়তো আপনারা ইতিমধ্য পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে জেনে গেছেন। তবে এরপরও যদি আপনাদের
জমির দলিল তল্লাশির ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হয় তাহলে আমাদের কমেন্ট বক্সে সমস্যাটি
জানিয়ে দেবেন। আমরা সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ। আর এতক্ষণ আমাদের সাথে
থাকার জন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।
Please comment according to Blogger Mamun website policy. Every comment is reviewed.
comment url