বি আর এস খতিয়ান যাচাই যেভাবে করবেন
আপনারা হয়তো জমির দলিল ও খতিয়ান সম্পর্কে সবাই কমবেশি জানেন। কিন্তু আপনারা বি আর এস খতিয়ান কি, বি আর এস খতিয়ান যাচাই কিভাবে করতে হয় এই সম্পর্কে জানেন কি? যদি না জেনে থাকেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। কারণ এই পোস্টটিতে আমরা বি আর এস ও আর এস খতিয়ান কি এবং বি আর এস খতিয়ান যাচাই কিভাবে করতে হয় এই নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।
বি আর এস রেকর্ড কি - বি আর এস খতিয়ান যাচাই
বর্তমান যুগ ডিজিটাল যুগ। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেকটি অফিসের কাজই অনলাইনে সম্পন্ন করা হয়। বাংলাদেশ ভূমি অফিস গুলোর কাজও এখন অনলাইনে সম্পন্ন করা হচ্ছে। যদিও অনেকেই জমির দলিল ও খতিয়ান চেক করার জন্য আগে ভূমি অফিসে যেত কিন্তু এই কাজগুলো এখন অনলাইনে ঘরে বসে করতে সক্ষম হচ্ছে।
আমাদের মাঝে অনেকে আছে যারা জমির খতিয়ান ও দলিল সম্পর্কে জানলেও বি আর এস রেকর্ড কি এই সম্পর্কে জানে না। বি আর এস রেকর্ড হলো- “যে রেকর্ড বা খতিয়ান এক পৃষ্ঠা বিশিষ্ট ৯ টি কলামযুক্ত এবং আড়াআড়ি হয় সেই রেকর্ড বা খতিয়ান কে সাধারণত বি আর এস রেকর্ড বলে”। এই খতিয়ান বা রেকর্ডটি মূলত বি এস খতিয়ানের মতোই তবে এই খতিয়ানের পৃষ্ঠার উপরে সিটি জরিপের সিল মারা থাকে।
আরো পড়ুনঃ ভোটার আইডি কার্ড নাম সংশোধন করার নিয়ম- ২০২৩
১৯৯৮ থেকে ১৯৯৯ সাল হতে বর্তমানে চলমান জরিপকে সাধারণত ভাবে বি আর এস রেকর্ড বা
খতিয়ান বলে। বি আর এস রেকর্ড সব সময় এক পৃষ্ঠা বিশিষ্ট ৯ টি কলাম যুক্ত হবে।
এছাড়া অনেক সময় দলিল বিশিষ্ট কোন মন্তব্য বা তথ্য দেওয়ার জন্য এক্সট্রা কলাম
থাকতে পারে। যেখানে সি এস এবং আর এস খতিয়ান লম্বালম্বি হয় সেখানে বি আর এস
খতিয়ান সব সময় আড়াআড়ি হয়ে থাকে।
এছাড়াও ১৯৯৮-১৯৯৯ সাল হতে চলমান বর্তমানে যে জরিপ হয় সেই জরিপকে সাধারণত ভাবে
বি আর এস খতিয়ান বা রেকর্ড বলা হয়।
বি আর এস রেকর্ড কত সালে হয়?
বি আর এস রেকর্ড বা খতিয়ান ১৯৯৮ থেকে ১৯৯৯ সাল হতে চলমান বর্তমান সময়ের মধ্যে
সংঘটিত হয়েছে। তবে বি আর এস খতিয়ান বা রেকর্ডের সর্বশেষ জরিপ হয়েছিল ১৯৯০
সালে। এবং বি আর এস খতিয়ান রেকর্ডটি ১৯৯০ সালের জরিপ অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে।
যেটি ঢাকা অঞ্চলের মহানগর হিসাবেও অনেকের কাছে পরিচিত।
আর এস রেকর্ড কি?
আর এস খতিয়ান বা রেকর্ড হলো- কোন খতিয়ানের একবার জরিপ হওয়ার পর যদি তাতে কোন ভুলত্রুটি ধরা পড়ে এবং পরবর্তীতে সেইভুল ত্রুটি সংশোধন করার জন্য আবার যদি কোন জরিপ করা হয় তাহলে সেই জরিপকে সাধারণত আর এস খতিয়ান বা রেকর্ড বলে। অনেক সময়, এস এ জরিপের আলোকে প্রস্তুত খতিয়ানে অনেক ধরনের ভুল ত্রুটি থাকে।
সাধারণত এই ভুলত্রুটি গুলো জরিপ কর্মচারীদের সরেজমিনে ঠিকঠাক মতো তদন্ত না করা কারণে হয়। আর এই ভুলত্রুটি গুলো সংশোধন করার জন্য আমাদের দেশের সরকার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরেজমিনে ভূমি মাপ-ঝোঁক করে পুনরায় খতিয়ান প্রস্তুত করার উদ্যোগ নিয়েছেন।
এই উদ্যোগে প্রস্তুতকৃত খতিয়ানই সাধারণত আর এস খতিয়ান নামে পরিচিত। যদিও আর এস
খতিয়ান সারাদেশে এখন পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত হয়নি তবে কিছু কিছু জেলায়
প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের অনেক জেলায় আর এস খতিয়ান বি এস খতিয়ান
নামে পরিচিত।
আর এস রেকর্ড কত সালে হয়?
ব্রিটিশদের তৈরিকৃত সি এস জরিপের ৫০ বছর পর আর এস জরিপ কার্যকৃত হয়েছে। মূলত আর
এস জরিপই হলো ব্রিটিশদের তৈরিকৃত সি এস জরিপের আপডেট ভার্সন। এই আর এস
জরিপটি পূর্ববর্তী সকল জরিপের চাইতে অধিক গ্রহণযোগ্য এবং নির্ভরযোগ্য বলে
মনে করা হয়।
আরো পড়ুনঃ অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে? ২০২৩
আর এস খতিয়ান বা রেকর্ডটি ১৯৬৬ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে সংঘটিত করা হয়েছে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশের সর্বস্তরে আর এস খতিয়ানটি সম্পূর্ণভাবে প্রকাশিত
হয়নি। তবে কিছু কিছু অঞ্চলে প্রকাশিত হয়েছে।
বি আর এস খতিয়ান যাচাই যেভাবে করবেন
বর্তমান এই ডিজিটাল যুগে কে চাইবে জমির দলিল বা খতিয়ান অথবা বি আর এস খতিয়ান
ভূমি অফিসে এগিয়ে যাচাই করতে। সবাই চায় অনলাইনে ঘরে বসে বি আর এস খতিয়ান যাচাই
করতে। কিন্তু সবাই কি আর অনলাইনে বি আর এস খতিয়ান যাচাই করতে জানে? জানে না।
তাইতো আমরা এই পোস্টটিতে অনলাইনে বি আর এস খতিয়ান যাচাই কিভাবে করতে হয় তা ধাপে
ধাপে নিচে দেখিয়ে দিয়েছি। যাতে করে আপনারা ঘরে বসেই বি আর এস খতিয়ান যাচাই
করতে পারেন।
১। প্রথমত আপনার হাতের মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপ অথবা কম্পিউটারে গুগল অথবা ক্রম যেকোন একটা ব্রাউজার ওপেন করতে হবে। তারপর সেই ব্রাউজারে land.gov.bd লিখে সার্চ করতে হবে।
২। সার্চ বাটনে ক্লিক করার পর আপনার সামনে নিচের মত একটি ইন্টারফেস আসবে।
৩। তারপর উপরে পেজটি স্ক্রল করে একটু নিচে আসলে আপনারা নিচের মত একটি ইন্টারফেস দেখতে পাবেন সেখানে লাল দাগ দেওয়ার ডিজিটাল ল্যান্ড রেকর্ডে ক্লিক করতে হবে।
৪। তারপর আপনাদের সামনে নিচের মত একটি ইন্টারফেস আসবে। সেখানে লাল দাগ দেওয়া খতিয়ান অনুসন্ধান অপশনে ক্লিক করে দেবেন।
৫। এরপর আপনাদের সামনে নিচের মত একটি ইন্টারফেস আসবে সেখান থেকে আপনি কোন জেলায় থাকেন সেই জেলার নামের উপরে ক্লিক করে দেবেন।
আরো পড়ুনঃ অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত দিন লাগে
৬। তারপর আপনার সামনে যে ইন্টারফেসকে আসবে সেটি একটি স্ক্রল করে নিচে গেলে নিচের মত একটি ইন্টারফেস দেখতে পাবেন। সেখান থেকে আপনি কোন ধরনের খতিয়ান বের করতে চান সেই খতিয়ানের উপরে ক্লিক করে দেবেন। আমরা এখানে বি আর এস খতিয়ানের উপরে ক্লিক করলাম।
৭। এরপর আপনার সামনে নিচের মত একটি ইন্টারফেস আসবে যেখানে আপনাকে আপনার জেলা, মৌজা, খতিয়ান নাম্বার অথবা দাগ নাম্বার, এবং একটি ক্যাপচার কোড টাইপ করতে হবে। তারপর অনুসন্ধান করুন অপশনে ক্লিক করতে হবে।
৮। এবং ফাইনালি আপনার সামনে নিচের মত একটি বি আর এস খতিয়ান চলে আসবে।
আর আপনি যদি এই খতিয়ানটি ডাউনলোড করতে চান তাহলে আবেদন করুন অপনে ক্লিক করে পরবর্তী ইন্টারফিজে প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন গুলো দিয়ে ডাউনলোড করতে পারবেন।
বি আর এস রেকর্ড সংশোধন করবেন যেভাবে
অনেক সময় অনেকে দলিল করতে যেয়ে দেখে যে তার দলিল ঠিক আছে কিন্তু রেকর্ডে বিভিন্ন ধরনের ভুল। যেমন আর এস রেকর্ড ভুল, বি আর এস রেকর্ডে ভুল, সি এস রেকর্ডে ভুল ইত্যাদি। এখন এই ভুলগুলো সংশোধন করা প্রত্যেকের জন্য খুবই জরুরী।
আরো পড়ুনঃ নতুন পাসপোর্ট বানাতে কি কি লাগে
কিন্তু আমাদের মাঝে অনেকেই এই ভুলগুলো সংশোধন কিভাবে করতে হয় এ বিষয়ে জানে না।
তাই তো আমরা এই পোস্টটিতে ডিআরএস রেকর্ড সংশোধন কিভাবে করতে হয় এ বিষয়ে আলোচনা
করেছি। চলুন তাহলে জেনে নেই বি আর এস রেকর্ড সংশোধন কিভাবে করতে হয় এই
সম্পর্কে।
বি আর এস রেকর্ড সংশোধনের বিষয়টি আসলে রেকর্ডের ভুলের উপরে নির্ভর করে। এখন আপনি বি আর এস রেকর্ডে কি ধরনের ভুল করেছেন সেই ভুলের উপরে নির্ভর করে সংশোধন করা হয়। তবে সর্বশেষ প্রকাশিত ২০১৫ সালের ভূমি মন্ত্রণালয়ের আইন শাখা- ০১ অনুযায়ী তিন ধরনের কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রেকর্ডের ভুল সংশোধন করা যায়।
- সহকারী ভূমি কমিশনার বা AC Land অফিস
- ভূমি আপিল বোর্ড
- সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বা Land Survey Appellate Tribunal
১। সহকারী ভূমি কমিশনার বা AC Land অফিসঃ আপনি যদি আপনার জমির বি আর এস রেকর্ডে বিভিন্ন ধরনের করণিক ভুল যেমন- নামের ভুল, পিতার নামের পদবীর ভুল, অংশের পরিমাণ বসানো তে ভুল, দাগ নং অনুযায়ী ভুল, গ্রামের নামের ভুল ইত্যাদি সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের ভুল হলে আপনারা সহকারী ভূমি কমিশনার বা AC Land অফিসে আবেদনের মাধ্যমে সংশোধন করতে পারেন। এছাড়াও আপনার রেকর্ডটি যদি প্রতারণামূলক বা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল হয় তাহলেও সহকারী ভূমি কমিশনার অফিসে বিধিমালা ১৯৫৫ এর বিধি ২৩ এর ৪ নং উপবিধি অনুযায়ী রেকর্ড সংশোধনের জন্য আবেদনের মাধ্যমে সংশোধন করতে পারবে।
২। ভূমি আপিল বোর্ডঃ যদি রেকর্ডের কোন ভুলের ফলে স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিরোধ সৃষ্টি হয়। যেমন- জমির মালিকানা নিয়ে টানাটানি, স্বত্বের পরিমাণ হ্রাস-বৃদ্ধি, অন্যের স্বত্বের পরিবর্তন ঘটলে ইত্যাদি এই ধরনের ভুলগুলো সংশোধন করার জন্য আপনাকে ভূমি আপিল বোর্ডে আবেদন করার মাধ্যমে রেকর্ডের ভুলগুলো সংশোধন করে নিতে হবে।
৩। Land Survey Appellate Tribunal বা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগঃ যদি কোন জমির মালিকানা সংক্রান্ত দাবীতে রেকর্ডে ভুল হয়। যেমন- কোন জমির ভোগ দখল থাকা সত্ত্বেও অন্য কেউ সেই জমির রেকর্ড মালিকানা দাবি করা, ভুল সংশোধন করতে গিয়ে কেউ লাভবান বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ইত্যাদি ভুলগুলো সংশোধন করার জন্য আপনি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করার মাধ্যমে সংশোধন করতে পারবেন। যদি কোন জমির রেকর্ড চূড়ান্ত প্রকাশের পর ভুল সংশোধন করার জন্য আবেদন করে তাহলে সেটি এই বিভাগের সংশোধন করা হয়।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক বৃন্দ, এতক্ষণ আপনার সাথে বি আর এস রেকর্ড বা খতিয়ান কি, আর এস
রেকর্ড বা খতিয়ান কি, অনলাইনে বি আর এস খতিয়ান যাচাই কিভাবে করতে হয় ইত্যাদি
বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে এবং দেখানো হয়েছে। আশা করি
আপনারা পুরো বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। আর আপনি যদি এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ে
থাকেন তাহলে খুব সহজেই অনলাইনে বি আর এস খতিয়ান যাচাই করতে পারবেন। আর এই রকম
আরো পোস্ট পড়তে নিয়মিত আমাদের ব্লগার মামুন এই ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।
Please comment according to Blogger Mamun website policy. Every comment is reviewed.
comment url