১৬ ই ডিসেম্বর কি হয়েছিল? জেনে নিন
ডিসেম্বর মাসের নাম শুনলেই বাঙ্গালীদের মনে বিজয়ের উল্লাস জেগে ওঠে। কারণ এই ডিসেম্বর মাসেই ১৬ই ডিসেম্বর দিনটি বাঙালিরা বিজয় দিবস হিসেবে পালন করে। কিন্তু এই 16 ই ডিসেম্বর কি হয়েছিল এটা কি সব বাঙালি জানে? জানে না। তাইতো এই পোস্টটিতে আমরা ১৬ই ডিসেম্বর কি হয়েছিল এবং ১৬ই ডিসেম্বর স্মরণীয় কেন এছাড়াও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সর্বশেষ শত্রুমুক্ত জেলা কোনটি এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব।
ভূমিকা - ১৬ ই ডিসেম্বর কি হয়েছিল?
ডিসেম্বর মাস মানেই বাঙ্গালীদের বিজয়ের মাস। কারণ দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানী
রাজাকার বাহিনীর সাথে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বাঙালিরা এই মাসে ১৬ই ডিসেম্বর
বিজয় লাভ করে। তাইতো বাঙালিরা প্রত্যেক বছর এই মাসের এই দিনটি ধুমধাম এর সাথে
পালন করে। কিন্তু আসলে কি হয়েছিল এই দিন? কেনই বা বাঙ্গালীদের কাছে এই দিনটি
স্মরণীয়? কেনই বা বাঙালিদের কাছে ৫ ডিসেম্বর বিখ্যাত? ইত্যাদি সব প্রশ্নের
উত্তর নিয়েই আজকের এই পোস্টটি। এই পোস্টটিতে মূলত আমরা আলোচনা করবো ১৬ই
ডিসেম্বর কি হয়েছিল? বাঙ্গালীদের কাছে ১৬ই ডিসেম্বর স্মরণীয় কেন? ১৯৭১ সালে
১৬ই ডিসেম্বর কি বার ছিল ইত্যাদি সব বিষয় নিয়ে। তাই চলুন দেরি না করে সেগুলো
জেনে নেই।
১৬ ই ডিসেম্বর কি হয়েছিল? জেনে নিন
সালটি ছিল ১৯৭১ সাল। কিন্তু ১৯৭১ সালের আগে ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন সংঘটিত হয়। যেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। কিন্তু আওয়ামী লীগের এই জয় পশ্চিম পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী মেনে নিতে পারেনি। তাইতো তারা বাঙ্গালীদের নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে ২৫ শে মার্চ রাতে বাঙ্গালীদের উপর রক্তাক্ত হামলা চালায়। যেই হামলা কে তারা “অপারেশন সার্চলাইট” নামকরণ করে।
আরো পড়ুনঃ এশিয়া মহাদেশে কয়টি দেশ অবস্থিত
এই রাতে তারা বাঙ্গালীদেরকে গণহারে হত্যা করে বাংলাদেশ দখলের সিদ্ধান্ত নেয়। এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে 26 শে মার্চ রাত ১ঃ৩০ মিনিটে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তারা ভেবেছিল বাঙালিদেরকে তারা ফু দিয়ে মোমবাতির আলোর মতো নিভিয়ে দেবে। কিন্তু ঘটনা ঘটে উল্টো। এই রাতে বাঙ্গালীদের মনের আগুন তো নিভেনি বরণ আরো শত কোন বৃদ্ধি পায়।
কারণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে গ্রেপ্তারের আগেই তিনি বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে একটি তারবার্তা পাঠায়। যে বার্তাটি ইপিয়ারের ওয়ারলেসের মাধ্যমে প্রচার করা। কিন্তু আসল ঘটনা এখান থেকেই শুরু। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করার পরেও পাকিস্তানীরা বাংলাদেশের ভূখণ্ড ছেড়ে যায় নি। বরণ শুরু হয় বাংলাদেশকে স্বাধীন করার উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধ।
যেই যুদ্ধে অংশ নেয় বাংলাদেশ ও ভারতের শত শত মানুষ। তারপর দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে ৩০ লাখেরও অধিক প্রাণের বিনিময়ে ১৬ই ডিসেম্বর বাঙালিরা বিজয় লাভ করে। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর এই দিনটিতে ভারতীয় সেনা ও মুক্তিবাহিনীদের কাছে ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে বর্তমানে ঢাকা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রায় ৯১৬৩৪ জন সদস্য আত্মসমর্পণ করে।
সেই আত্মসমর্পণ দলিলে সই করেন পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলে কমান্ডের
অধিনায়ক জেনারেল এ এ কে নিয়াজী এবং পাশে বসা ছিল মিত্রবাহিনীর লেফটেন্যান্ট
জেনারেল জগজিৎ সিং। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর এই দিনটিতেই মূলত বাংলাদেশ ও
ভারতের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনীর কাছে পাকিস্তানি বাহিনীরা আনুষ্ঠানিকভাবে
আত্মসমর্পণ করেছিল। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে
হত্যার মাধ্যমে বাঙালির স্বাধীনতার যেই সূর্য অস্ত গিয়েছিল তা পুনরায় উদিত
হয়েছিল এই ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর দিনটিতে।
১৬ ডিসেম্বর স্মরণীয় কেন? জেনে নিন
১৬ই ডিসেম্বর সমস্ত বাঙালিদের বিজয় দিবস। এই দিনটিতেই বাংলাদেশ যুদ্ধে
বিজয় লাভ করে। এই দিনটি বাঙ্গালীদের কাছে স্মরণীয় হওয়ার অনেকগুলো কারণ
রয়েছে। যে কারণগুলো নিচে তালিকা আকারে দেওয়া হলো।
আরো পড়ুনঃ এশিয়া মহাদেশের আয়তন কত
- ১৬ই ডিসেম্বর বাঙালিদের বিজয় দিবস যে কারণে এই দিনটি স্মরণীয় একটি দিন।
- ৩০ লাখের অধিক শহীদের বিনিময়ে এই দিনটিতে বাঙালিরা বিজয় লাভ করে যে কারণে দিনটি স্মরণীয়।
- ২ লাখ মা-বোনের বীরাঙ্গনার আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই দিনটিতে বাঙালিরা বিজয় লাভ করে যে কারণে এই দিনটি স্মরণীয়।
- এই দিনটিতেই মূলত তৈরি হয় নতুন এক ইতিহাস যে কারণে দিনটি স্মরণীয়।
- এই দিনটিতেই পাকিস্তানি বাহিনীরা ভারতীয় সেনা ও মুক্তিবাহিনীদের কাছে আত্মসমর্পণ করে যে কারণে বাঙ্গালীদের কাছে দিনটি স্মরণীয় একটি দিন।
- ১৬ই ডিসেম্বর ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে এই দিবসের সূচনা হয়। যে কারণে এই দিনটি বাঙ্গালীদের কাছে স্মরণীয় ইত্যাদি।
এছাড়াও আরো অনেক কারণ আছে যে কারণে ১৬ই ডিসেম্বর বাঙ্গালীদের কাছে স্মরণীয়
একটি দিন। কিন্তু এই দিনটি স্মরণীয় হওয়ার মূল কারণ হলো বিজয় দিবস। ১৬ই
ডিসেম্বর বাঙালিদের বিজয় দিবস।
৫ ডিসেম্বর কেন বিখ্যাত? জেনে নিন
৫ ডিসেম্বর বিখ্যাত হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কারণটি সেটি হলো- এই দিনে অর্থাৎ ৫ ডিসেম্বর ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা দেন যে “পূর্ব পাকিস্তানের নাম হবে বাংলাদেশ”।
৫ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবহুল দিন। এই দিনে
দিল্লিতে একটি সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভারতের প্রতিরক্ষা
সচিব কে বিল লাল বলেছিলেন যে, বাংলাদেশে এখন সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং সার্বভৌম
একটি দেশ। এবং ভারত খুব তাড়াতাড়ি বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি
দেবে।
ভারতের বিমান বাহিনী ৫ ডিসেম্বর এই দিনটিতে বিমান থেকে প্রায় ১২ ঘন্টা ব্যাপী
বোমা হামলা চালায়। এই ১২ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে ভারতীয় বিমান বাহিনী তেজগাঁও
কুর্মিটোলায় ৫০ টনের মত একটি বোমা ফেলে। এই বোমা ফেলার ফলে পাকিস্তানি
হানাদার বাহিনীদের প্রায় ৯০ টি অস্ত্রবাহী ট্রাক ধ্বংস হয়ে যায়।
আরো পড়ুনঃ পশ্চিম এশিয়ায় কোন কোন দেশ অবস্থিত
এছাড়াও ৫ ডিসেম্বর ভারতীয় বিমান বাহিনী ঢাকা সহ বেশ কয়েকটি শহরে
ক্রমাগত বোমা হামলা চালায়। যার ফলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের ব্যাপক
ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবং এক পর্যায়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীদের সব বিমানঘাঁটি
কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। যার ফলে বাংলাদেশের আকাশ হানাদার মুক্ত হয়ে যায়।
বাংলাদেশ পাকিস্তান যুদ্ধে স্থলপথে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে ৫ ডিসেম্বর ভারতীয়
মিত্রবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট এগিয়ে আসে। এবং তারা এই দিনে বাংলাদেশের বিভিন্ন
সেক্টরের প্রধান প্রধান সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে ঢাকার সঙ্গে কুমিল্লা, সিলেট,
রংপুর, যশোর, চট্টগ্রাম, নাটোর ও রাজশাহীর সড়ক পথের যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে
বিচ্ছিন্ন করে দেয়। যার ফলে পাকিস্তানি বাহিনীরা সঠিকভাবে যোগাযোগ
করতে পারেনি। এবং সঠিকভাবে যোগাযোগ করতে না পারায় তারা যুদ্ধে পরাজিত
হয়েছিল।
এছাড়াও আরো অনেক কারণ রয়েছে যেগুলোর কারণে ৫ ডিসেম্বর বিখ্যাত।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর কি বার ছিল জেনে নিন
পৃথিবীর বুকে স্বাধীন রাষ্ট্র নামে বাংলাদেশের জন্ম তখনও সময়ের ব্যাপার ছিল। সূর্য তখন প্রায় ডুবি-ডুবি। পূর্ব বাংলার যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর ঢাকা তখনও প্রায় থমথমে, থেমে থেমে যুদ্ধ তখনও চলছিল ঢাকার আশেপাশে। এমন পরিবেশের মধ্যে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাঁ ৫ টা ২৫ মিনিট। এই সময় বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথভাবে গঠিত কমান্ডের কাছে ঢাকার রেসকোর্স ময়দান (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)
যেখানে পাকিস্তানে বাহিনীর অধিনায়ক জেনারেল এ কে নিয়াজী সহ সমস্ত পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল বাঙ্গালীদের কাছে। এরপরই শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়ের উল্লাস। তারা একে একে শহরের পথে পথে অগ্রসর হয় এবং আকাশে ফাঁকা গুলিতে কম্পিত করে তোলে পুরো শহর এবং সবাই একই সাথে স্লোগান দেয় “জয় বাংলা”। এ যেন এক নতুন সূর্যের দেখা পায় বাঙালি। স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকার তারা অর্জন করে এই দিনটিতে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সর্বশেষ শত্রুমুক্ত জেলা কোনটি? জেনে নিন
বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয় লাভ করে ১৯৭১ সালে ১৬ই ডিসেম্বর। কিন্তু
বাংলাদেশে ২৬ শে মার্চে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে
প্রথম শত্রুমুক্ত হয় যশোর জেলা। এবং ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ
জেলায় স্বাধীন হয়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সর্বশেষ
শত্রুমুক্ত হয় রাজবাড়ী জেলা। যেটি ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত জেলা
হিসেবে ঘোষিত হয়।
উপসংহার - ১৬ ই ডিসেম্বর কি হয়েছিল?
প্রিয় পাঠক বৃন্দ, আশা করছি এতক্ষণে আপনারা ১৬ই ডিসেম্বর কি হয়েছিল, 16 ই
ডিসেম্বর স্মরণীয় কেন, ৫ ডিসেম্বর বিখ্যাত কেন ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর পেয়ে
গেছেন। আসলে বাঙালি হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই এই ইতিহাস গুলো জানা দরকার। কারণ
আমরা দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে ৩০ লাখে ও অধিক শহীদের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন
করেছি। আমরা কি তাদের ভুলে যাব। কখনোই না।তাইতো আমরা এই পোস্টটিতে ১৬ই ডিসেম্বর
কি হয়েছিল এই সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরেছি। যাতে করে আপনারা সঠিক তথ্যটি
জানতে পারেন। পুরো পোষ্টটি পড়ে আমাদের পাশে থাকার জন্য।। ধন্যবাদ।।
Please comment according to Blogger Mamun website policy. Every comment is reviewed.
comment url