অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে? ২০২৩
সামনে যেহেতু নির্বাচন তাই আমাদের প্রত্যেকেরই ভোটার আইডি কার্ড সম্পর্কে একটু জানা দরকার। তাই আজকের আর্টিকেলটিতে অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে ও কি কি লাগে, কত দিন সময় লাগে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। চলুন তাহলে জেনে নেই ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে ও কি কি লাগে।
আপনি যদি কোন দেশের নাগরিক হন তাহলে আপনার অবশ্যই ভোটার আইডি কার্ড সম্পর্কে জানা দরকার। তাই আপনাদের ভোটার আইডি কার্ড সম্পর্কে জানানোর জন্য আজকের আর্টিকেলটিতে আমরা ভোটার আইডি কার্ড সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।ভূমিকা
আমাদের প্রত্যেকের জন্য ভোটার আইডি কার্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস। জীবনের প্রায় প্রতিটি কাজের সাথেই ভোটার আইডি কার্ড জড়িত। হোক সেই কাজটা অফিসিয়াল বা আনঅফিসিয়াল।কিন্তু এই ভোটার আইডি কার্ডে হয়ে থাকে অনেক সময় অনেক ধরনের ভুল। আর আমাদের মাঝে অনেকে আছে যারা ভোটার আইডি কার্ডে এই ভুলগুলো সংশোধন করতে কত টাকা লাগে কি কি লাগে ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে জানে না।
তাই তাদের উদ্দেশ্যে আজকের আর্টিকেলটিতে আমরা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে, কি কি লাগে এবং অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কতদিন লাগে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে আলোচনা করবো।
এছাড়াও এর পাশাপাশি আমরা আরো আলোচনা করবো ভোটার আইডি কার্ড নাম সংশোধন করার নিয়ম, জন্ম তারিখ সংশোধন করার নিয়ম, বয়স সংশোধন করার নিয়ম ইত্যাদি সম্পর্কে। তাই চলুন আর দেরি না করে এই বিষয়গুলো জেনে নেই।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে
আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যাদের ভোটার আইডি কার্ডে ভুল রয়েছে। তারা ভোটার
আইডি কার্ড ভুল নিয়ে কোনো রকম টেনশন করবেন না। কেননা বর্তমান যুগে ভোটার আইডি
কার্ড ভুল সংশোধন করা একদম পানির মত সহজ। চলুন তাহলে জেনে নেই ভোটার আইডি কার্ড
সংশোধন করতে কি কি লাগে এই সম্পর্কে।
আরও পড়ুনঃ পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের ৪ টি ক্যাটাগরি রয়েছে। এই ৪ টি ক্যাটাগরি বা ধরণের উপর ভিত্তি করে আপনার ভোটার আইডি কার্ডের ভুল সংশোধনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কাগজপত্র লাগতে পারে।
আর সাধারণত ভোটার আইডি কার্ডের ভুল সংশোধন করতে যে যে কাগজপত্র লাগে তা নিচে পয়েন্ট আকারে উল্লেখ করা হলো-
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ বা বোর্ড পরিক্ষার সার্টিফিকেট
- জন্ম নিবন্ধন বা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ
- পাসপোর্ট অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স
- সার্ভিস বই বা এমপিও শীটের কপি
- বিয়ের কাবিন নামা
- পিতা মাতার আইডি কার্ড ও সন্তানের আইডি কার্ড
এছাড়াও এগুলোর যেকোনো ২ টি ডকুমেন্টস বা প্রমানপত্র দিয়ে জাতীয় পরিচয়
পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড ভুল সংশোধন করা যায়।
ভোটার আইডি কার্ড নাম সংশোধন করার নিয়ম- ২০২৩
ভোটার আইডি কার্ডে অনেক সময় নিজের নামের বানান ভুল থাকে। যেমন- “বুলবুল” এর
জায়গায় অনেক সময় “বালবুল” হয়ে যায়। এরকম ভুল সংশোধন করার জন্য যে সকল
ডকুমেন্টস বা কাগজপত্র প্রয়োজন সে সকল ডকুমেন্টস বা কাগজপত্রের নাম নিচে উল্লেখ
করা হলো-
- PSC/JSC/SSC/HSC যে কোন শিক্ষা বোর্ডের সনদ
- জন্ম নিবন্ধন বা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন কপি
- ড্রাইভিং লাইসেন্স এর কপি (যদি থাকে)
- পাসপোর্ট এর কপি (যদি থাকে)
- সন্তানের পাবলিক বা বোর্ড পরীক্ষার সনদ
- সন্তানের জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড
- এমপিও অথবা সার্ভিস বইয়ের কপি
- বৈবাহিক সনদ বা কাবিননামার ফটোকপি
- তদন্ত প্রতিবেদন (যদি করা হয়)
- উপজেলা নির্বাচন অফিসারের প্রতিবেদন
উপরে উল্লেখিত ডকুমেন্টস বা কাগজপত্র গুলোর যেকোনো এক বা একাধিক ডকুমেন্টস আপনার
কাছে থাকলেই, আপনি আপনার নামের সম্পূর্ণ বানান বা আংশিক বানান বা পদবী পরিবর্তন
করার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ভোটার আইডি কার্ড জন্ম তারিখ সংশোধন করার নিয়ম- ২০২৩
অনেক সময় দেখা যায় আমাদের জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ডে
নাম, পিতা-মাতার নাম, ঠিকানা ইত্যাদি বিষয়গুলো ঠিক থাকলেও অনেক সময়
জন্ম তারিখ ভুল থাকে। এক্ষেত্রে ভোটার আইডি কার্ড জন্ম তারিখ সংশোধন করার
জন্য যে সকল ডকুমেন্টস বা কাগজপত্র প্রয়োজন সে সকল ডকুমেন্টস বা কাগজপত্র নিচে
উল্লেখ করা হলো-
- PSC/JSC/SSC/HSC যে কোন শিক্ষা বোর্ডের সনদ বা রেজিস্ট্রেশন কার্ডের সত্যায়িত অনুলিপি (যার ক্ষেত্রে যেটি প্রযোজ্য)
- জন্ম নিবন্ধন বা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদের কপি
- সকল ভাই বোনের ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি
- সকল ভাই বোনের ভোটার আইডি কার্ডে নম্বর উল্লেখিত পিতার ওয়ারেশ/উত্তরাধিকারের সনদ
- পাসপোর্ট এর ফটোকপি (যদি থাকে)
- ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ফটোকপি (যদি থাকে)
- বৈবাহিক সনদ বা কাবিননামা
- সিভিল সার্জন কর্তৃক বয়স্ক মানের রিপোর্ট
- সার্ভিস বই/এমপিও শীটের কপি
- চাকরির আইডি কার্ডের ফটোকপি
- জেলা চেয়ারম্যান কর্তৃক পারিবারিক সনদ (পরিবারের সকল সদস্যের নাম জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর এবং জন্মের ক্রম নম্বরসহ)
- অবসর অথবা পেনশন বইয়ের সত্যায়িত কপি (শুধুমাত্র অবসরপ্রাপ্তদের জন্য)
- যারা মুক্তিযোদ্ধা তাদের মুক্তিযোদ্ধার সনদ এবং মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রাপ্ত নানা ধরনের ভাতাদি প্রাপ্তির প্রমাণপত্র
আরও পড়ুনঃ ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে ২০২৩
উপরে উল্লেখিত কাগজপত্র গুলোর মধ্যে যেগুলো আপনার কাছে আছে সেগুলো আবেদন করার সময় আবেদনপত্রের সাথে জমা দেবেন। আর মনে রাখবেন-
- “ক” ক্যাটাগরিতে ১ থেকে ৩ বছর পর্যন্ত জন্ম তারিখ পরিবর্তনের আবেদন থাকে ।
- “খ” কেটাগরিতে ৩ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত জন্ম তারিখ পরিবর্তনের আবেদন থাকে।
- “গ” ক্যাটাগরিতে ৫ থেকে ১০ বছর জন্ম তারিখ গড়মিলের আবেদন থাকে।
- “ঘ” ক্যাটাগরিতে ১০ বছরের বেশি জন্ম তারিখ পরিবর্তন এর আবেদন থাকে।
ভোটার আইডি কার্ড ঠিকানা সংশোধন করার নিয়ম- ২০২৩
যদি আপনার ভোটার আইডি কার্ডে আপনার বর্তমান ঠিকানা অথবা স্থায়ী ঠিকানা ভুল থাকে,
তাহলে সেই ভুল সংশোধন করতে আবেদনের জন্য যে সকল ডকুমেন্টস লাগবে তা নিচে
উল্লেখ করা হলো-
- জন্ম নিবন্ধন বা অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি
- সিটি কর্পোরেশন/ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা কর্তৃক প্রদত্ত সনদ
- ইউটিলিটি বিল এর ফটোকপি
- জমির দলিল
- চৌকিদারী ট্যাক্স অথবা পৌর করের রশিদ
আপনার ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা সংশোধন করতে আবেদনের সাথে উপরে উল্লেখিত
ডকুমেন্টসগুলো অবশ্যই জমা দেবেন। আর মনে রাখবেন- “ক” ক্যাটাগরি
থেকেই আপনার ভোটার আইডি কার্ডের স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানার ভুল সংশোধন করা
হয়।
অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে? ২০২৩
আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে এ সম্পর্কে জানতে চায়।যেহেতু ভোটার আইডি কার্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ডকুমেন্টস। তাই এ সম্পর্কে জানতে চাওয়াটা স্বাভাবিক।
আর আপনি যদি আগে থেকেই ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে এ সম্পর্কে
জানেন তাহলে আপনার অতিরিক্ত কোন অর্থ খরচ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাই এ
সম্পর্কে জানা খুবই জরুরী। চলুন তাহলে জেনে নেই ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত
টাকা লাগে।
- প্রথমবার, অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য আবেদন করতে আপনাকে ২৩০ টাকা ফি জমা দিতে হবে। (১৫% ভ্যাট সহ)।
- দ্বিতীয়বার, অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ডে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ও অন্যান্য তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন করতে ৩৪৫ টাকা ফি জমা দিতে হবে। (১৫% ভ্যাট সহ)।
- এরপর যতবার আপনি ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য আবেদন করবেন তার প্রতিবারের জন্য আপনাকে ৫৭৫ টাকা আইডি কার্ড রি ইস্যু ফি হিসেবে জমা দিতে হবে। (১৫% ভ্যাট সহ)।
অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত দিন লাগে
আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা পাসপোর্ট করতে চায় কিন্তু তার আইডি কার্ডে একটি ভুলের জন্য পাসপোর্ট করতে পারছে না। আবার সেই ভুল সংশোধনের জন্য আবেদন করেও কোন প্রকার রেসপন্সও পাচ্ছে না। যার ফলে তারা অনেক টেনশনে থাকে।
কিন্তু সে যদি ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত সময় লাগে এ সম্পর্কে জানত তাহলে
কিন্তু তার এই এক্সট্রা টেনশনটা হত না। তাই চলুন আজকের আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমরা
জেনে নেই অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কতদিন লাগে-
আরও পড়ুনঃ ইন্ডিয়ান পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে সর্বোচ্চ ৭ দিন থেকে ৪৫ দিন
সময় লাগে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন এই সময়টিকে ৪ টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে
দিয়েছে।
- সংশোধন ক্যাটাগরি “ক” তে সময় লাগে ৭ দিন যেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হলেন উপজেলা নির্বাচন অফিসার।
- সংশোধন ক্যাটাগরি “খ” তে সময় লাগে 15 দিন যেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হলেন জেলা নির্বাচন অফিসার।
- সংশোধন ক্যাটাগরি “গ” তে সময় লাগে ৩০ দিন যেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হলেন আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার।
- সংশোধন ক্যাটাগরি “ঘ” তে সময় লাগে ৪৫ দিন যেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হলেন NID Wing এর মহাপরিচালক।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক বৃন্দ, আশা করি আপনারা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। আপনারা যদি এই আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হন তাহলে আপনার বন্ধু-বান্ধবীদের কাছে পোস্টটি শেয়ার করুন। এবং এরকম আরো পোস্ট করতে নিয়মিত এই ব্লগার মামুন ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।
Please comment according to Blogger Mamun website policy. Every comment is reviewed.
comment url