হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ - হার্ট অ্যাটাক থেকে বাচাঁর উপায়
আজকের আর্টিকেলটিতে আমাদের আলোচ্য বিষয় হলো- হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ ও হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে। এর পাশাপাশি আমরা আরো আলোচনা করবো হার্ট অ্যাটাক কি, হার্ট অ্যাটাক কত প্রকার, হার্ট অ্যাটাক কেন হয়, হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে।
ভূমিকা
“হার্ট অ্যাটাক” যার নাম শুনলে আমরা সবাই ভয় পাই। হার্ট অ্যাটাক এমন একটি রোগ যা যেকোনো সময় যেকোনো বয়সের মানুষের জীবন ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই হার্ট অ্যাটাক সম্পর্কে আমাদের জানা খুবই জরুরী। তাই আজকের আর্টিকেলটিতে আমরা হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ ও বাঁচার উপায় সহ হার্ট অ্যাটাক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
আজকের পোস্টের মাধ্যমে আপনারা হার্ট অ্যাটাক কি, হার্ট অ্যাটাক কত প্রকার, হার্ট অ্যাটাক কেন হয়, হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ, হার্ট অ্যাটাক থেকে বাচাঁর উপায় ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। আশা করি আপনারা সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
হার্ট অ্যাটাক কি জানুন
“হার্ট অ্যাটাক” যাকে আমরা নীরব ঘাতক বা মরণব্যাধি রোগ নামে চিনি। এই রোগ যেকোনো
সময় যেকোন মানুষের জীবনকে করে দিতে পারে ধ্বংস। বর্তমান বিশ্বে মানুষের
মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হলো- হার্ট অ্যাটাক। তাই
হার্ট অ্যাটাক কি এ সম্পর্কে জানা খুবই জরুরী।
আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ
হার্ট অ্যাটাক মূলত আমাদের শরীরের হার্টের একটি রোগ। আমরা জানি, আমাদের শরীরের হাটের উপরিভাগে এক ধরনের করোনারি আর্টারি বা ধমনী রয়েছে, যার মাধ্যমে আমাদের হার্ট পুষ্টি এবং অক্সিজেন পায়।
কিন্তু যখন আমরা অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খাই তখন আমাদের হার্টের
করোনারির ধমনীতে সেই চর্বি জমে যায়। যার ফলে রক্ত জমাট বাঁধে এবং রক্তনালীর
রক্ত চলাচলে বাধাঁ সৃষ্টি হয় ঠিক এই অবস্থাকে “হার্ট অ্যাটাক”
বা মেডিকেলের ভাষায় “মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন” বলা হয়।
হার্ট অ্যাটাক কত প্রকার জেনে নিন
বর্তমানে মানুষের মৃত্যুর অন্যতম একটি কারণ হলো- হার্ট অ্যাটাক। বর্তমান বিশ্বে হার্ট অ্যাটাকের মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। হার্ট অ্যাটাক মূলত আমাদের দেহের হৃদপিন্ডের একটি আল্ট্রাসাউন্ড।
হার্ট অ্যাটাক কি? এই সম্পর্কে আমরা উপরের প্যারা থেকে জেনেছি। এখন আমরা এই
প্যারা থেকে হার্ট অ্যাটাকের বিভিন্ন প্রকারভেদ সম্পর্কে জানবো।
হার্ট অ্যাটাক সাধারণত ৩ প্রকারের হয়-
- STEMI- ST সেগমেন্ট এলিভেশন মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশনঃ ST সেগমেন্ট এলিভেশন মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন হলো- আমাদের দেহের হার্ট অ্যাটাকের এক ধরনের গুরুতর রূপ যেখানে আমাদের দেহের হার্টের করোনারি ধমনী সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায় এবং রক্তনালীতে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়।
- করোনারি স্প্যাজম বা অস্থির এনজাইনাঃ করোনারি স্প্যাজম বা অস্থির এনজাইনা হলে মূলত আমাদের দেহের ধমনীর প্রাচীর শক্ত হয়ে যায় এবং বুকে ব্যথা হতে পারে বা রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে এছাড়াও করোনারি ধমনীতে কিছু নিয়ে আসতে পারে।
- NSTEMI- নন-এসটি সেগমেন্ট এলিভেশন মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশনঃ নন-এসটি সেগমেন্ট এলিভেশন মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন এই ধরনের হার্ট অ্যাটাক সাধারণত আমাদের হার্টের কম ক্ষতি করে। এ ধরনের হার্ট অ্যাটাক হলে আমাদের দেহের ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রামে এসটি সেগমেন্টের উচ্চতার কোন পরিবর্তন হয় না।
উপরে উল্লেখিত হার্ট অ্যাটাকের তিনটি প্রকারভেদের মধ্যে যেকোনো একটিতে যদি আপনারা
আক্রান্ত হন তাহলে দ্রুত হসপিটালে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন। কেননা হার্ট
অ্যাটাক একটি ইমারজেন্সি রোগ।
হার্ট অ্যাটাক কেন হয় এই সম্পর্কে জানুন
উপরে উল্লেখিত প্যারাগুলো থেকে আমরা হার্ট অ্যাটাক কি, হার্ট
অ্যাটাক কত প্রকার এই সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানবো হার্ট অ্যাটাক কেন
হয়? হার্ট অ্যাটাক হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। বর্তমান
চিকিৎসকরা হার্ট অ্যাটাক হওয়ার অনেক কারণ গুলোর মধ্যে থেকে পাঁচটি কারণকে
সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেছেন। যে পাঁচটি কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো-
- ধূমপান
- উচ্চ রক্তচাপ
- ডায়াবেটিস
- উচ্চ কোলেস্টেরল
- বংশগত কিছু কিছু কারণ ইত্যাদি
এখানে কোলেস্টেরল কিন্তু আবার দুই ধরনের রয়েছে ভালো কোলেস্টেরল এবং খারাপ কোলেস্টেরল। হার্ট অ্যাটাক মূলত খারাপ কোলেস্টেরলের জন্য হয়ে থাকে।
হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ কি কি জেনে নিন
হার্ট অ্যাটাক খুবই মারাত্মক একটি রোগ। এই রোগে বেশিরভাগ মানুষই মারা যায়।
কিন্তু আমরা এটাও জানি যে সব ধরনের রোগেরই একটি লক্ষণ থাকে হার্ট অ্যাটাকও তার
ব্যতিক্রম নয়। এই রোগেরও রয়েছে কিছু লক্ষণ। যেই লক্ষণগুলো কখনো কখনো একসঙ্গে
প্রকাশ নাও পেতে পারে। চলুন তাহলে জেনে নেই হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ গুলো কি
কি-
- বুকে ব্যথা শুরু হবেঃ হার্ট অ্যাটাক হলে মূলত আপনার বুকের মাঝখান বরাবর বা বাম পাশে ব্যথা হতে পারে। এছাড়াও রোগীর বুকের মধ্য কিছু আটকে আছে বা চেপে বসে আছে এরকম অনুভূত হতে পারে।
- শরীরের অন্য জায়গায় ব্যথা শুরু হবেঃ বুকের ব্যথা আপনার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারেন। যেমন-বাঁ হাত বা ডান হাতে, পিঠে, চোয়ালে, গলায়, ঘাড়ে। অনেক সময় পেটের উপরের অংশ এ ধরনের ব্যথা হতে পারে।
- শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারেঃ হার্ট অ্যাটাক হলে মূলত রোগের তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। এছাড়াও রোগীর বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে।
- মাথা ঝিমঝিম অথবা মাথা ঘোরানো বোধ করাঃ হার্ট অ্যাটাক হলে রোগী মাথা ঘুরে অনেক সময় পড়েও যেতে পারে।
- আতঙ্কিত হয়ে পড়াঃ হার্ট অ্যাটাক হলে রোগী অনেক সময় আতঙ্কিত হয়ে যায়। যার ফলে সে অস্থিরতা বোধ করে এবং তার মনে হতে পারে যে তিনি হয়তো মারা যাচ্ছেন।
- বিনা কারণে ঘামতে শুরু করাঃ যদি কোন ব্যক্তি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয় তাহলে সে বসে বসে বিনা কারণে ঘামতে থাকে। এই ঘামের পরিমাণ অনেক সময় বেশি বা কম হতে পারে ইত্যাদি।
উপরে উল্লেখিত লক্ষণ গুলোর মধ্যে যদি কোন লক্ষণ আপনার মত দেখতে পান। তাহলে আপনি
দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
হার্ট অ্যাটাক থেকে বাচাঁর উপায় জানুন
যে কোনো বয়সের মানুষ যে কোনো সময় হার্ট অ্যাটাকের শিকার হতে পারে। এক্ষেত্রে বয়স্ক মানুষ এবং পুরুষদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। তবে নারীদেরও বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বাড়তে পারে। বর্তমান চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন হার্ট অ্যাটাক হওয়ার অন্যতম একটি বিশেষ কারণ।
আরো পড়ুনঃ দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
এছাড়াও. হার্ট অ্যাটাক হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কারণ উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ সম্পর্কে উপরে আলোচনা করা হয়েছে।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে এই মারাত্মক একটি রোগ থেকে বাঁচার উপায় কি? সেই
বাঁচার উপায় গুলোই আজকের পোস্টটিতে উল্লেখ করবো। চলুন তাহলে জেনে নেই হার্ট
অ্যাটাক থেকে বাঁচার উপায় গুলো কি কি-
- ধূমপান ত্যাগ করতে হবে
- উচ্চমাত্রায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
- চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে
- নিয়মিত ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করতে হবে
- জাঙ্ক ফুড বা ফাস্টফুড পরিত্যাগ করতে হবে
- মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে
- ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে
- প্রতিদিন মিনিমাম ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে
- নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে ইত্যাদি
আশা করি আপনারা হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
হার্টের জন্য উপকারী খাবার সম্পর্কে জেনে নিন
বর্তমানে আমরা প্রায় সবাই হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগের সাথে কম-বেশি পরিচিত। কেননা, আমাদের আশেপাশেই অনেকেই হুটহাট করে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন এই রোগটি হয় মূলত অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পালন করলে।
তাই হার্ট সুস্থ রাখার জন্য আমাদের জীবনযাপনে আনতে হবে কিছু পরিবর্তন। কিন্তু শুধু জীবনযাপনে পরিবর্তন আনলেই হবে না, পরিবর্তন আনতে হবে আমাদের দৈনন্দিন খাবার তালিকায়ও।
তাই আজকের পোস্টটিতে আমরা হার্টের জন্য উপকারী কিছু খাবারের নাম উল্লেখ করবো। যেই
খাবারগুলো আমাদের হার্টকে আরো শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে। চলুন তাহলে জেনে
নেই হাটের জন্য উপকারে কিছু খাবারের নাম।
- বিভিন্ন ধরনের বাদাম (যেমন- চিনাবাদাম, হ্যাজেলনাট, আমন্ড, আখরোট, পেকান)
- বিটের রস
- কমলা
- শিম
- সামুদ্রিক মাছ
- রসুন
- মিষ্টি আলু
- টক দই
- গাজর
- সয়াদুধ
- স্পিরুলিনা
- তোলা
- ডুমুর
- লাল মরিচ
- জাম্বুরা
- ফ্লাক্স বীজ
- আদা
- গ্রিন টি
- কফি
- বিভিন্ন ধরনের ফলমূল ও শাকসবজি (যেমন- আপেল, পেয়ারা, নাশপাতি, লাল শাক, কচু শাক ইত্যাদি)
- লাল চাল বা লাল আটার মতো খাবার
- ডিম (সপ্তাহে সর্বোচ্চ ছয়টি)
- চামড়া মুক্ত মুরগি
- লেবু পানি
- ডার্ক চকলেট ইত্যাদি
আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস থেকে বাচাঁর ঘরোয়া উপায়
উপরে উল্লেখিত খাবারগুলো হাটের জন্য খুবই উপকারী। আপনি যদি হার্টের রোগী হন
তাহলে এই খাবারগুলো নিয়মিত খেতে পারেন।
হার্টের ব্লক দূর করার খাবার সম্পর্কে জানুন
আমরা যখন অস্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত বা ফ্যাট যুক্ত খাবার বেশি
পরিমাণে খায় তখন আমাদের দেহে হার্টের উপরিভাগে যে করোনারি ধমনী থাকে সেই ধমনীতে
চর্বি জমে যায়। তখন আমাদের হার্ট ব্লক হয়ে যায়। যার ফলে দেখা দেয় হার্ট
অ্যাটাক। এ অবস্থায় আপনাদের খাবার তালিকায় নিয়মিত কিছু খাবার রাখলে
হার্টের ব্লক দূর করা সম্ভব। চলুন তাহলে সেই খাবারগুলোর নাম জেনে নেই-
- মধু
- রসুন
- ডালিম
- ওট
- মাছ
- টমেটো
- জলপাইয়ের তেল
- লাউ (লাউ সেদ্ধ করে সাথে ধনেপাতা ও হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে খেতে হবে)
- দুধ ও আমলকি
- লেবু পানি
আজকের মতো এই পর্যন্তই আলোচনা করা হলো। আর একটা কথা অবশ্যই মনে রাখবেন- হার্ট
অ্যাটাক কিন্তু কোন সাধারণ রোগ নয় তাই কেউ যদি হার্ট অ্যাটাক করে তাকে সাথে সাথে
ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন।
লেখকের শেষ কথা
আশা করি, আমরা আপনাদেরকে হার্ট অ্যাটাক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে পেরেছি। হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচার জন্য আমাদের হার্টকে রাখতে হবে সুস্থ। আর হার্টকে সুস্থ রাখার জন্য দরকার হার্টের জন্য উপকারী খাবার। তাই নিয়মিত হার্টের জন্য উপকারী খাবার খান এবং সুস্থ থাকুন। কারণ- “স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল”।
Please comment according to Blogger Mamun website policy. Every comment is reviewed.
comment url