ব্যাংক কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি জেনে নিন
আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা ব্যাংক কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি এ সম্পর্কে গুগল বা অন্যান্য ওয়েবসাইটে সার্চ করে জানতে চাই। তাই আজকের আর্টিকেলটিতে আমরা ব্যাংক কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি এবং আরো বিভিন্ন ব্যাংকের সংজ্ঞা ও ব্যাংক সম্পর্কে বিস্তারিত উপস্থাপন করব।
ভূমিকা
ব্যাংক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এটি আমরা সবাই জানি। কিন্তু আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা ব্যাংক কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি এই বিষয়গুলো জানে না। আবার অনেকে আছে যারা এই বিষয়গুলো জানলেও অন্যান্য ব্যাংকের সংজ্ঞা, মালিকানার ভিত্তিতে ব্যাংক কত প্রকার ও কি কি, ব্যাংকের সম্পদ ও দায় কি কি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক কাকে বলে ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে অজানা।
তাই আজকের পোস্টটিতে আমরা ব্যাংক কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি এবং ব্যাংকের প্রকারভেদ, ব্যাংকের সম্পদ ও দায় গুলো কি কি এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব। তাই ব্যাংক সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
ব্যাংক কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি
ব্যাংক এটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ব্যাংক শব্দটির অর্থ লম্বা বেঞ্চ বা লম্বা টুল। ব্যাংক শব্দের উৎপত্তি হয়েছে প্রাচীন latin শব্দ- ব্যাংক (Banke), ব্যাংকাস (Bancus), ব্যাংকো (Banco), ব্যাংকা (Banka) ইত্যাদি শব্দ থেকে। এখন প্রশ্ন ব্যাংক কাকে বলে? ব্যাংক হলো জনগণের সঞ্চয় এবং ঋণ প্রদানের জন্য মধ্যস্থকারী একটি সংস্থা।
আরও পড়ুনঃ মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো
যেখানে জনগণ তার প্রয়োজনে টাকা গচ্ছিত রেখে সঞ্চয় করতে পারে আবার প্রয়োজনে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারে।এক্ষেত্রে ব্যাংক যেমন জনগণের গচ্ছিত সঞ্চয়ের উপরে সুদ প্রদান করে তেমনি ব্যাংক আবার ঋণগ্রহণকারীর নিকট থেকে সুদ আদায় করে। অনেক সময় ব্যাংক আবার জনগণের সঞ্চিত অর্থ বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করে মুনাফা অর্জন করে থাকে।
এখন প্রশ্ন ব্যাংক কত প্রকার ও কি কি? ব্যাংক মূলত তিন প্রকার। যথা-
- কেন্দ্রীয় ব্যাংকঃ যে ব্যাংকে কেন্দ্র করে একটি দেশের মুদ্রা বাজার ও ব্যাংক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে সাধারণভাবে তাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূলত একটি দেশের অর্থনীতি, মুদ্রাস্ফীতি, মুদ্রাসংকোচন ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। একটি দেশের কেন্দ্র ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে সেই দেশের সরকার।
- বাণিজ্যিক ব্যাংকঃ যে ব্যাংক মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে জনগণের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ এবং ঋণ প্রদান করে তাকে বাণিজ্যিক ব্যাংক বলে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মূলত লোন প্রদান, ব্যবসায় হিসাব, বিনিয়োগ সেবা, মুদ্রায়ন ও মুদ্রাস্ফীতি ব্যবস্থাপনা, বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ, চেক প্রক্রিয়াজাতকরণ, LC(letter of credit) প্রদান, আরো অন্যান্য বাণিজ্যিক সেবা সরবরাহ করে।
- বিশেষায়িত ব্যাংকঃ যে সকল ব্যাংক বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা প্রদান করার জন্য এবং বিশেষ কোনো খাতের উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় তাকে বিশেষায়িত ব্যাংক বলে। যেমন- বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি ব্যাংক ইত্যাদি। এই ব্যাংকগুলোর মূল লক্ষ্য মূলত গ্রাহকদের প্রয়োজন মেটানো। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো সম্পূর্ণরূপে সরকারের মালিকানাধীন।
ব্যাংক বলতে কি বুঝায় - ব্যাংক কাকে বলে
ব্যাংক একাউন্ট কত প্রকার
বর্তমানে আমাদের দেশে এমন কোন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই মুশকিল যার কোন ব্যাংক
একাউন্ট নাই।কিন্তু আমাদের সবার ব্যাংক হিসাব থাকলেও আমরা অনেকেই জানিনা যে
ব্যাংক হিসাব কত প্রকার।তাই চলুন ব্যাংক একাউন্ট কত প্রকার এ সম্পর্কে
জেনে নেই।
আরও পড়ুনঃ যে ১০টি কম্পিউটার স্কিল অর্জন না করলেই নয়
- চলতি অ্যাকাউন্ট (Current Account): যে হিসাবের মাধ্যমে একজন গ্রাহক ব্যাংক চলাকালীন সময়ে দিনে যতবার ইচ্ছা অর্থ জমা এবং অর্থ উত্তোলন করতে পারেন এবং যে হিসাবের উপরে কোন প্রকার সুদ দেওয়া হয় না তাকে চলতি হিসাব বলে। এ ধরনের হিসাব সাধারণত ব্যবসায়ীরা বেশি করে থাকেন।
- সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট (Savings Account): যে হিসাবে মাধ্যমে একজন গ্রাহক ব্যাংক চলাকালীন সময়ে দিনে যতবার খুশি অর্থ জমা দিতে পারলেও দিনে ২ থেকে ৩ বারের বেশি অর্থ উত্তোলন করতে পারে না এবং যে হিসেবে উপরে সীমিত হারে সুদ প্রদান করা হয় তাকে তো সঞ্চয় হিসাব বলে। এ ধরনের হিসাব সাধারণত চাকরিজীবী পেনশনকারী, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা বেশি করে থাকে।
- পুনর্নবীকরণ ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট (Recurring Deposit Account): সাধারণত নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য কিছু পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় এবং উচ্চহারে সুধ অর্জনের জন্য যে হিসাব খোলা হয় তাকে পুনর্নবীকরণ ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট বলে।
- ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট (Fixed deposit Account): যে হিসাবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এই শর্তে ব্যাংকে অর্থ জমা দেওয়া হয় যে অর্থের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্থ উত্তোলন করতে পারবে না তাকে ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট বলে। তবে গ্রাহক পেনাল্টি পরিশোধ করার মাধ্যমে তার হিসাব বন্ধ করার অনুরোধ করতে পারেন। আর হ্যাঁ এই হিসাবে কিন্তু অবশ্যই সুদ দেয়া হয়।
উপরে উল্লেখিত চারটি হিসাবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত হিসাব দুটি হলো- চলতি
হিসাব ও সঞ্চয় হিসাব কিন্তু আমার মতে সঞ্চয় হিসাব খোলাই সবচেয়ে ভালো হবে।
ব্যাংকের কাজ কি
ব্যাংকের প্রধান কাজই হলো জনগণের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করা এবং সেই সংগৃহীত
অর্থ ঋণ হিসেবে আবার জনগণকে প্রদান করা। এছাড়াও আন্তর্জাতিক লেনদেনের
ক্ষেত্রে ব্যাংকের ভূমিকা অপরিসীম। বর্তমানে একটি দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা
শক্তি বলা হয় ব্যাংকে। ব্যাংক একটি দেশের আমদানি-রপ্তানির লেনদেন সচল
রাখে। এছাড়াও ব্যাংকের অন্যান্য কাজগুলো নিচে দেয়া হলো-
- টাকা সংরক্ষণ ও সঞ্চয়
- লোন প্রদান
- মুদ্রাস্ফীতি ও মুদ্রা সংকোচন নিয়ন্ত্রণ
- বিনিয়োগ সেবা
- চেক প্রক্রিয়াজাতকরণ
- লেটার অফ ক্রেডিট প্রদান
- বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ
- শিপিং ডকুমেন্ট
- সিকিউরিটি প্রধান
- মুদ্রার রূপান্তর ইত্যাদি।
বেসরকারি/বাণিজ্যিক ব্যাংক কাকে বলে
যে সকল ব্যাংক মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ প্রদান করে তাকে বেসরকারি ব্যাংক বা বাণিজ্যিক ব্যাংক বলা হয়। অন্যকথায়- যে সকল ব্যাংক ব্যক্তি মালিকানায়, যৌথ মালিকানায় বেসরকারি উদ্যোগে গঠিত ও মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় তাকে বেসরকারি ব্যাংক বা বাণিজ্যিক ব্যাংক বলে। বাংলাদেশে এরূপ ব্যাংকের সংখ্যা ৪৩ টি।ব্যাংকগুলো হলো-
- বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড
- আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
- ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড
- এবি ব্যাংক লিমিটেড
- ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড
- সিটিজেনস ব্যাংক পিএলসি
- সিটি ব্যাংক লিমিটেড
- বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড
- কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড
- ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড
- ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড
- ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড
- এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড
- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
- আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেড
- আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেড
- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড
- মেঘনা ব্যাংক লিমিটেড
- মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড
- মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড
- মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড
- ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড
- ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেড
- এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড
- এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড
- ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড
- পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড
- প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড
- প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড
- মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড
- পূবালী ব্যাংক লিমিটেড
- সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেড
- সীমান্ত ব্যাংক লিমিটেড
- শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
- সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
- সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড
- ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড
- যমুনা ব্যাংক লিমিটেড
- স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড
- উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড
- ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড
- গ্লোবাল ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেড (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক)
- ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক কাকে বলে
- সোনালী ব্যাংক লিমিটেড
- রূপালী ব্যাংক লিমিটেড
- অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড
- জনতা ব্যাংক লিমিটেড
- বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক
- বেসিক ব্যাংক লিমিটেড
উপরে উল্লেখিত, ব্যাংক গুলোর মধ্যে প্রধান রাষ্ট্রায়ত্ত বা বাণিজ্যিক ব্যাংক হলো সোনালী ব্যাংক। এই ব্যাংকগুলো সাধারণ জনগণের মাঝে সঞ্চয় প্রবণতা সৃষ্টি করে।
মালিকানার ভিত্তিতে ব্যাংক কত প্রকার
মালিকানার ভিত্তিতে ব্যাংক ৪ প্রকার। নিচে ব্যাংকগুলো উল্লেখ করা হলো-
- সরকারি ব্যাংক
- বেসরকারি ব্যাংক
- স্বায়ত্তশাসিত ব্যাংক
- সরকারি ও বেসরকারি যৌথমালিকানার ব্যাংক
উপরে উল্লেখিত, ৪টি ব্যাংকই মালিকানার ভিত্তিতে গঠিত ও পরিচালিত হয়।
ব্যাংকের সম্পদ ও দায় কি কি
ব্যাংক হলো এক ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা সাধারণ জনগণের উদ্বৃত্ত অর্থ আমানত হিসেবে সংগ্রহ করে পুঁজি গড়ে তোলে এবং সেই পুঁজি ব্যবসায়ীদের মাঝে ঋণ হিসেবে প্রদান করে। এক্ষেত্রে ব্যাংক আমানত সরবরাহকারীকে সুদ প্রদান করে এবং ঋণগ্রহণকারীর নিকট থেকে সুদ আদায় করে। ব্যাংক যেহেতু একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাই এর সম্পদ ও দায় থাকে।
একটি ব্যাংকের সম্পদ গুলো হলো-
- নগদ সম্পদ
- ব্যাংক বিল ও সার্টিফিকেট
- বন্ধকী
- ব্যাংক আকৃতি সঞ্চয়
- আন্তঃব্যাংক ঋণ
- ক্রেডিট চিঠি
- সরকারি সিকিউরিটিজ
- সিকিউরিটিজের সুদ ইত্যাদি
একটি ব্যাংকের দায়গুলো হলো-
- আমানত সংরক্ষণ
- ঋণ প্রদান
- বিনিয়োগ ব্যবস্থা
- মুদ্রায় পরিবহণ
- অর্থনীতি ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি
উপরে উল্লেখিত পয়েন্ট গুলোর মাধ্যমে একটি ব্যাংকের সম্পদ ও দায় বিবর্ণিত হয়ে থাকে।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক, আশা করি আপনারা উপরের পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন এবং ব্যাংক সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন। আপনাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা ব্যাংকে একটি একাউন্ট বা হিসাব খুলতে চান কিন্তু বুঝতে পারতেছেন না কি ধরনের অ্যাকাউন্ট খুললে আপনার ভালো হবে। এক্ষেত্রে আমার মতামত হলো আপনি সঞ্চয়ী হিসাব খুলতে পারেন। এরকম আরো আর্টিকেল পেতে আমাদের ব্লগার মামুন ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।
Please comment according to Blogger Mamun website policy. Every comment is reviewed.
comment url