শেভ করলে গালের দাড়ির বৃদ্ধি, আরও বাড়ে কি না?
ভূমিকা
ধরুন আপনাকে যদি আমি প্রশ্ন করি বলুন তো পুরুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় কিসে? তাহলে উত্তরে আপনি অবশ্যই বলবেন “দাড়িতে”। তাহলে বুঝুন একজন পুরুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে দাড়ির ভূমিকা কত। বর্তমানে বিশ্বে দাড়ি একটি ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু চাইলেই কি আর এই ফ্যাশন সবাই করতে পারে। অনেকে আছে যাদের মুখে দাড়ি ওঠেনা, আবার অনেকে আসে যাদের মুখে দাড়ি আছে, কিন্তু ওটাকে দাড়ি ওঠা বলে না।
কত বছর বয়সে দাড়ি গজায়
আসলে ছেলেদের দাড়ি ঠিক কত বছর বয়সে যে ওঠে, তা বলা খুবই মুশকিল। উদাহরণস্বরূপ, আমার কথাই বলা যায়- আমার অনেক বন্ধু আছে যাদের দাড়ি নবম ও দশম ক্লাসে থাকা অবস্থায় উঠেছিল। কিন্তু আমার দাড়ি উঠেছিল তাদের থেকে প্রায় ৩ বছর পর।
আরও পড়ুনঃ চোখের সমস্যা দূর করার উপায়
এছাড়া আমার গ্রামের অনেক ছোট ভাই আছে যাদের দাড়ি আমার আগে উঠেছিল। আসলে
সত্য কথা বলতে- দাড়ি ওঠার নির্দিষ্ট কোন বয়স নেই। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য
সংস্থার (WHO) একটি প্রতিবেদনে তারা উল্লেখ করেছে যে, ছেলেদের সাধারণত ১১ থেকে ১৫
বছর বয়সের মধ্য দাড়ি ওঠা শুরু হয়। যদিও দাড়ি ওঠার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে
বয়ঃসন্ধিকাল ও হরমোনের উপর নির্ভরশীল।
চাপ দাড়ি গজানোর উপায়
বর্তমানে দাড়ি একটি ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার দাড়ির স্টাইল যত সুন্দর তার যেন গার্লফ্রেন্ডও তত বেশি। বর্তমানে মেয়েরা যে ছেলেদের দাড়ি একটু স্টাইল করা তাদেরকে বেশি পছন্দ করে। তাহলে এখন যাদের মুখে দাড়ি নেই তাদের উপায় কি? তাই তাদের উদ্দেশ্যে দাড়ি গজানোর কিছু উপায় নিচে উল্লেখ করা হলো-
- নির্দিষ্ট বিরতিতে দাড়ি ছাটুনঃ আপনারা অনেকেই মনে করেন যে ঘন ঘন দাড়ি কাটলে হয়তো দাড়ি লম্বা হবে, কিন্তু এটি আপনাদের ভুল ধারণা। এর কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। তাই ঘন ঘন দাড়ি না কেটে একটি নির্দিষ্ট বিরতি বা ৪থেকে ৬ সপ্তাহ পরপর দাঁড়ি কাটুন। এতে করে আপনার দাড়ি ঘন হবে।
- পেঁয়াজের রসের ব্যবহারঃ পেঁয়াজের রসে প্রচুর পরিমাণে সালফার থাকে। যা দাঁড়ি এবং চুল গজাতে সাহায্য করে। তাই আপনি যদি নিয়মিত দাড়ি বা চুলের গোড়ায় পেঁয়াজের রস ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার দাড়ি বা চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি পাবে।
- স্ক্রাব করুনঃ ত্বকের জন্য উপকারী একটি পদ্ধতি হলো স্ক্রাব করা। স্ক্রাপ করলে ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং মৃত কোষ দূর হয়ে যায়। যার ফলে নতুন দাড়ি গজায়।
- ম্যাসাজ করুনঃ আপনি যদি চাপ দাড়ির অধিকারী হতে চান তাহলে দিনে অন্তত ২ বার ১০ মিনিট করে আপনার হাত দিয়ে মুখে হালকা করে ম্যাসাজ করুন। এতে করে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে এবং আপনার দাড়ি খুব দ্রুত বাড়বে।
দাড়ি গজানোর ঘরোয়া উপায়
বর্তমানে বেশিরভাগ পুরুষেরই আক্ষেপের নাম দাড়ি। আপনারা যারা অনেক চেষ্টা-ফিকির করার পরেও মুখে দাড়ির দেখা পাননি। তাদের জন্যই দাড়ি গজানোর কিছু ঘরোয়া উপায় নিচে উল্লেখ করা হলো-
১। চামড়া পরিষ্কার রাখাঃ আপনারা যারা ঘন দাড়ির অধিকারী হতে চান, তারা মুখের চামড়া পরিষ্কার রাখুন। মুখের চামড়া পরিষ্কার রাখতে অন্তত সকাল-সন্ধ্যায় একবার করে গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে নিন।
২। পেঁয়াজের রসঃ আপনি প্রতিদিন আপনার চুলের বা গাড়ির গোড়ায় পেঁয়াজের রস ব্যবহার করুন। কারণ পেঁয়াজের রস দাড়ির গোড়ায় লাগালে দাড়ি বাড়াতে সাহায্য করে।
৩। কোঁকড়ানো দাড়ি ছেটে ফেলাঃ আপনি আপনার মুখের কোঁকড়ানো দাড়িগুলো ছেঁটে ফেলুন। কারণ কোঁকড়ানো দাড়ি আপনার মুখের অন্য দাড়ির বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
৪। ইউক্যালিপটাস ব্যবহারঃ ইউক্যালিপটাস আছে এরকম ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা। কারণ এটি দাড়ির ঘনত্ব ও দাড়ি দ্রুত গজাতে সাহায্য করে।
৫। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানোঃ দাড়ি দ্রুত এবং ভালোভাবে গজানোর জন্য ভালোভাবে ঘুম হওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ ঘুম আমাদের দেহের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোকে পুনরায় গঠনে সাহায্য করে।
৬। আমলকি তেল ব্যবহারঃ দ্রুত ও ঘন দাড়ি গজাতে আমলকি তেলের ভূমিকা অনেক। আমলকি তেল ব্যবহারের নিয়ম- আমলকির তেল দিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট আপনার মুখ ম্যাসাজ করুন এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
দাড়ি গজানোর উপায় ঔষধ
দাড়ি গজানোর ওষুধ ব্যবহার করলেই যে দাড়ি গজাবে এমন গ্যারান্টি আজ পর্যন্ত কেউ
দিতে পারেনি।দাড়ি গজানোর বিষয়টি সম্পূর্ণ মানুষের বয়সন্ধিকাল ও হরমোনের উপর
ভিত্তি করে কম বা বেশি হয়।তাছাড়া দাঁড়ির উপর খাদ্যাভাস ও বংশগত প্রভাবও
রয়েছে। টেস্টোরেন হরমোন দাড়ি গজানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে। নিচে কিছু দাড়ি গজানোর ওষুধের নাম উল্লেখ করা হলো-
- কেমিষ্ট হারবাল কোম্পানির ক্যাপসুল টমেটোঃ এটি ব্যবহারের নিয়ম প্রতিদিন ২টি করে ২ বার খাওয়ার পর খাবেন, এভাবে ৯০ দিন সেবন করতে হবে। এই ওষুধটি মূলত আমাদের দেহের টেস্টোরেন হরমোন বৃদ্ধি করে।
- নেট্রাম মিউর ১২x এবং টেস্টিস ৩x ঔষধঃ এই দুটি ঔষধ কতটুকু কার্যকারী হবে তা সঠিক বলতে পারব না। কিন্তু এই হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দুটি দাড়ি গোঁফ গজানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করে।
যারা মুখে দাড়ি গজাতে চান। তারা এই ওষুধ দুটি অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেবন করবেন।
শেভ করলে গালের দাড়ির বৃদ্ধি, আরও বাড়ে কি না
আমাদের শরীরের দাড়ি ও মাথার চুল আমাদেরকে বিভিন্ন প্রতিকূলতা থেকে বাঁচানোর পাশাপাশি সৌন্দর্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও অধিক ভূমিকা রাখে। বর্তমানে দাড়ি ও মাথার চুলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একটি বিশাল অর্থনীতি। আমরা অনেকেই বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে সার্চ করে থাকি যে- শেভ করলে গালের দাড়ির বৃদ্ধি, আরো বাড়ে কি না।
আরও পড়ুনঃ কি খেলে চোখের সমস্যা দূর হয়
“হ্যাঁ” শেভ করলে গালের দাড়ি বৃদ্ধি পায় কিন্তু ঘন ঘন শেভ করলে
নয়। সাধারণত ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পরপর শেভ করলে গালের দাড়ি বৃদ্ধি পায় ও ঘন
হয়। গালের দাড়ি শেভ করার কিছু উপকারিতা ও অপকারিতা আছে। উপকারিতা
এবং অপকারিতা গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো-
উপকারিতা
- ত্বক সুন্দর করে
- মুখের চুল পরিষ্কার করে
- ত্বকের উপরে জমে থাকা মৃত কোষ থেকে মুক্তি দেয়
- ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে সুরক্ষা সৃষ্টি করে
- পিএইচ লেভেল বজায় রাখে
অপকারিতা
- মুখে এলার্জি বা চুলকানি হতে পারে
- রেজার বার্ণ হতে পারে
- ইনগ্রোন হেয়ার এন্ড বাম্পস হতে পারে
- পুরুষত্ব হ্রাস পায়
- স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়
- মুখে প্রচুর পরিমাণে ব্রণ হয়
- অ্যাজমার প্রকোপ বাড়িয়ে দেয় ইত্যাদি
দাড়ি গজানোর উপায় ডাক্তারের পরামর্শ
বর্তমানে আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা দাড়ি গজানোর উপায় খুজতেছেন। যাদের মুখে দাড়ি থাকে না তারাই আসলে দাড়ির মর্ম বুঝে। দাড়ি না থাকার ফলে তাদেরকে অনেক অসুবিধায় পড়তে হয় যেমন- বয়স বৃদ্ধি হলেও তাদেরকে বালকের মতো দেখা যায়, যার ফলে কোথাও তারা দাম পায় না।এছাড়াও বর্তমানে দেখা যাচ্ছে মেয়েরা দাড়িওয়ালা ছেলেদের বেশি পছন্দ করে।
তাই নিচে কিছু দাড়ি গজানোর উপায় সম্পর্কে ডাক্তারের পরামর্শ দেওয়া হলো। যেগুলো অনুসরণ করলে যাদের মুখে দাড়ি হয় না তারাও দাড়ির মজা উপভোগ করতে পারবেন। ডাক্তারের পরামর্শগুলো হলো-
- নতুন দাড়ি গজাতে এবং দাড়ি দ্রুত বাড়াতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর ভূমিকা অনেক। তাই যাদের মুখে দাড়ি হয় না তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স খেতে পারেন।
- কিছু কিছু ভিটামিন আছে যেমন- ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ভিটামিন সি, এবং মিনারেল যেগুলো দ্রুত দাড়ি গজাতে সাহায্য করে।
- আপনি যদি দ্রুত দাড়ি গজাতে চান তাহলে ইউক্যালিপটাস সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার ক্রিমটি ব্যবহার করুন। এটি দাড়ির ঘনত্ব দ্রুত বাড়িয়ে দেয়।
- আপনি প্রতিদিন ২.৫ মিলিগ্রাম বায়োটিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন। যা আপনার মুখে দাড়ি গজাতে কাজে দেবে।
এখন কথা হল- আপনি যেকোনো ওষুধি গ্রহণ করুন না কেন গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই
চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
কোন হরমোনের অভাবে দাড়ি গজায় না
একজন পুরুষের দাড়ি গজানোর বিষয়টি মূলত তার বয়সন্ধিকাল ও টেস্টোরেন হরমোনের উপর নির্ভরশীল। স্বাভাবিকভাবেই একজন পুরুষের ১১ থেকে ১৫ বছর বয়সের মধ্য দাড়ি গজিয়ে থাকে। এই বয়সের মধ্যে যদি কারো দাড়ি না ওঠে তাহলে তার হরমোনের অভাব রয়েছে। সাধারণত “টেস্টোরেন ও এন্ড্রোজেন” হরমোনের অভাবে দাড়ি গজায় না। যাদের শরীরে এই হরমোন দুটির অভাব রয়েছে তারা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
দাড়ি উঠে যাওয়ার কারণ
দাড়ি উঠে যাওয়ার অনেক গুলো কারণ আছে। তার মধ্যে কিছু কারণ নিচে উল্লেখ করা
হলো-
- নিউট্রিশন বা পুষ্টির অভাব
- টেস্টোরেন হরমোনের অভাব
- বংশগত প্রভাব
- ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের অভাব
- দাড়িতে সঠিক পণ্য ব্যবহার না করা
- মেডিসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য দাঁড়ি ঝরে পড়তে পারে
- ভেজা অবস্থায় দাঁড়ি আঁচড়ালে ইত্যাদি
উপসংহার
প্রিয় পাঠকগণ আশা করি আপনারা সবাই উপরের পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। পোস্টটি পড়ে আপনারা দাড়ি বৃদ্ধি করার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এছাড়াও দাড়ি বাড়ানোর উপায় সম্পর্কে ডাক্তারের পরামর্শ এবং কি হরমোনের অভাবে দাড়ি উঠে যায়, দাঁড়ি উঠে যাওয়ার বিভিন্ন কারণ ইত্যাদি বিষয়গুলো জানতে পেরেছেন।
আমার মতে যাদের মুখে দাড়ি নেই তারা উপরে উল্লেখিত মেডিসিন গুলো বাদে দাড়ি
বৃদ্ধি করার ঘরোয়া উপায় গুলো অনুসরণ করতে পারেন। এই পোস্টটি পড়ে আপনারা
যদি উপকৃত হন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের কাছে শেয়ার করুন।
Please comment according to Blogger Mamun website policy. Every comment is reviewed.
comment url